আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপরে বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সে বার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারেননি। দ্বিতীয় বার সুযোগ পেয়ে সেই কাজ করে দেখালেন। সোমবার (ভারতীয় সময়) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই দাবি করেন ট্রাম্প। কী কারণে প্রথম বারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি, সে কথাও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, অনেক বছর আগেই এই পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা উচিত ছিল। এর ফলে আমেরিকার অর্থনীতির উন্নতি হবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা তিনি কেবল একটি দেশের ক্ষেত্রেই কার্যকর করতে পেরেছিলেন। তা হল চিন। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘অনেক আগেই আমাদের এটা করা উচিত ছিল। প্রথম দফায় চিনের সঙ্গে এটা আমি করেওছিলাম। কিন্তু বাকিটা করতে পারিনি কোভিডের কারণে।’’ উল্লেখ্য, ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। করোনা ভাইরাসের অতিমারি সারা বিশ্বে প্রকট হয়ে উঠেছিল ২০২০ সালে। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, তা যদি না হত, তবে সেই সময়েই বিভিন্ন দেশের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা করতেন তিনি।
আরও পড়ুন:
পারস্পরিক শুল্ক থেকে আমেরিকায় প্রচুর বাড়তি অর্থ আসবে, দাবি ট্রাম্পের। এই বাড়তি অর্থের মাধ্যমে তিনি দেশের ঋণ পরিশোধ করবেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমরা ঋণ পরিশোধ করতে চলেছি। অনেক টাকা আমাদের কাছে আসতে চলেছে। দেশ এর আগে এত টাকা চোখেই দেখেনি। এই টাকা দিয়ে আমাদের অন্যতম কাজ হবে ঋণ শোধ করা। অনেক বছর আগেই এটা করা উচিত ছিল।’’ ট্রাম্প জানান, যেখানে সুযোগ রয়েছে, সেখানেই তিনি বাড়তি শুল্ক চাপাতে চান। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও উদ্দেশ্যসাধনের উপায় খুঁজছি না। যা ন্যায্য, আমি তা-ই চাইছি। যেখান থেকে সম্ভব এবং যতটা সম্ভব আমরা পারস্পরিক শুল্ক আদায় করব। কখনও কখনও তা ওদের সামর্থ্যের বাইরেও চলে যেতে পারে। হাজার হাজার কোটি ডলার আমাদের দেশে আসতে চলেছে।’’ বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রস্তাবের মাধ্যমে যুদ্ধ থামিয়েছেন বলেও দাবি করেন ট্রাম্প। আরও এক বার উঠে আসে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের প্রসঙ্গ। ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত-পাক পরমাণু শক্তিধর দেশের যুদ্ধও তিনি ‘বাণিজ্য দিয়েই’ থামিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছেন ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি। তার পরেই বিভিন্ন দেশের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন তিনি। জানান, আমেরিকার সঙ্গে যে সমস্ত দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক নেওয়া হবে। অন্যান্য দেশের পণ্য থেকেও নেওয়া হবে ১০ শতাংশ শুল্ক। এর পর ২ এপ্রিল শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করে বিভিন্ন দেশের তালিকা প্রকাশ করে ওয়াশিংটন। তা তিন মাসের জন্য স্থগিতও করে দেওয়া হয়। শুল্কের সময়সীমা নির্ধারিত হয় অগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ পেয়েছে। তার পর নতুন করে শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি ভারতের উপর তিনি আরোপ করেছেন ২৫ শতাংশ শুল্ক। তবে আলোচনার দরজা এখনও খোলা রেখেছেন।