ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভে উত্তাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। পুলিশের গুলিতে এখনও পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে নেপালের সংবাদমাধ্যম ‘কাঠমান্ডু পোস্ট’। আহত অন্তত ২০০। সোমবার সকালে কাঠমান্ডুর বাণেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। সম্প্রতি সে দেশের সরকার ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ, এক্স-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সকাল থেকে শুরু হয় প্রতিবাদ। বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যায়। ছাত্র-যুবদের একাংশ ব্যারিকেড ভেঙে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েন। প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি ছোড়ে পুলিশ। ছোড়া হয় রবার বুলেটও। কাঠমান্ডুর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা।
খাতায়-কলমে এই প্রতিবাদের নেতৃত্বে আছে নেপালের ‘জেন জ়ি’, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম। সোমবারের বিক্ষোভেও সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের। তবে শুধু ফেসবুক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার জন্যই এই প্রতিবাদ, এমনটা মনে করছেন না অনেকেই। কারণ নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। দেশে আর্থিক বৈষম্য নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছিল ছাত্র-যুবদের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, আগে থেকে পুঞ্জীভূত হওয়া ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে রবিবার। নেপাল সরকারের অবশ্য দাবি, দেশকে সুরক্ষিত রাখতেই সমাজমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি, বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করতেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে সরকার।
কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভের খণ্ডচিত্র। ছবি: রয়টার্স।
গত ২৮ অগস্ট নেপাল সরকার
জানিয়েছিল, সমাজমাধ্যমগুলিকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে সরকারের খাতায় নাম নথিভুক্ত
করাতে হবে। ৩ অগস্ট সেই সময়সীমা শেষ হয়। অধিকাংশ সমাজমাধ্যমই নেপালের সরকারি
নির্দেশ মানেনি। ৪ অগস্ট ফেসবুক, এক্স, হোয়াট্সঅ্যাপ-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম ব্যবহারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দেশের যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে আগেই নেপালের
নানা অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছিল সে দেশের সরকার। তবে টিকটক নিয়ে নিষেধাজ্ঞা
না থাকায় সেটির মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলেন প্রতিবাদীরা।
আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নিতেই অবশ্য একটি সাবধানি বিবৃতি দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সেখানে বলা হয়েছে, যাঁরা পার্লামেন্টের ভিতর ঢুকেছেন তাঁদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। একটি নির্দিষ্ট স্থানের নাম করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই জায়গার পর মিছিল এগোনোর কোনও পরিকল্পনা ছিল না। তার পরেও যাঁরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়েছেন, তাঁদের উদ্যোক্তারা স্বীকৃতি দিচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে।
গত মার্চ মাসে নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কাঠমান্ডুতে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা মোতায়েন করতে হয়। সেই বিক্ষোভের ছ’মাস কাটতে না-কাটতেই ফের অশান্তির আবহ তৈরি হল নেপালে। এর পরে ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র ভেঙে নেপালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০১৫ সালে অনুমোদিত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান। গত ১৭ বছরে ‘গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ নেপালে ১৩ বার সরকার বদল হয়েছে। তার পরেও হিমালয়ের কোলে থাকা ভারতের পড়শি এই দেশে শান্তি এবং সুস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এখন যেমন নেপালে ক্ষমতায় রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল)-এর নেতা ওলি, যিনি ‘চিনপন্থী’ বলেই পরিচিত।