Advertisement
E-Paper

সীমান্তে মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন অসংখ্য কচিমুখ

মুখে বলছেন বটে, তবে নিজের তৈরি করা আইনের জন্যই যে শরণার্থী শিশুদের এই হাল, তা মানতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০২:৪৫
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন আইনের মাসুল গুনতে হচ্ছে শরণার্থী শিশুদের। আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তেই বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে কয়েক হাজার অভিবাসী শিশু।

এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অক্টোবর থেকে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে ১৩৫৮টি শিশু নিজেদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত উদাহরণ বলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। রিপোর্ট নিয়ে মুখে কুলুপ ট্রাম্প প্রশাসনের। অথচ মার্কিন সরকারের ‘অফিস অব রিফিউজি সেটলমেন্ট’-এর তথ্যের ভিত্তিতেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

চলতি বছরের মে মাস থেকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চালু করেছিল মার্কিন সরকার। যার মানে, অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে কোনও পরিবার আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করলে পরিবারের সাবালক সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে মার্কিন প্রশাসন। অর্থাৎ তাঁদের সরাসরি জেলে ঢোকানো হবে। কিন্তু ওই পরিবারের নাবালক সদস্য বা শিশুদের ঠাঁই হবে কোনও পালক বাবা-মায়ের বাড়ি অথবা সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকা কোনও সংস্থার হাতে। এই নীতি চালু করার সময়েই হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে কেউ সীমান্ত পেরোলো তাঁকে দাগী অপরাধী হিসেবেই গণ্য করা হবে।’’ সেই পরিবারের শিশুদের কী হবে? গত সপ্তাহে কেলিকে এমন প্রশ্ন করায় তাঁর জবাব ছিল, ‘‘অবৈধ অভিবাসীদের শিশুদের জায়গা হবে কোনও অনাথ আশ্রমে অথবা কোথাও একটা...।’’

আর এই নিয়ম মানতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বাবা-মায়ের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে মারাত্মক অসহায় পড়ছে শিশুগুলি। যার প্রভাব পড়ছে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুগুলির বাবা-মায়ের উপরও। গত মাসেই নিজের তিন বছরের ছেলে আর স্ত্রীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে সেই শোক সহ্য করতে না পেরে টেক্সাসের এক জেলে আত্মহত্যা করেন হন্ডুরাস থেকে আসা এক ব্যক্তি। এক মানবাধিকার কর্মী জানান, জেলে আটক অনেক মা-ই অভিযোগ করেছেন সীমান্তে টহলের দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা অনেক সময় শিশুদের স্নান করানোর নাম করে তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছেন। পরে তাঁরা আর তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাননি। এক প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকে প্রকাশিত খবর, ওয়াশিংটনের সি ট্যাকে এক জেলে ২০০ জন মহিলাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যাঁরা অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরোতে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে সেখানকার অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাঁদের শিশুদের পাশের ঘরে আটকে রেখে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। শিশুগুলি মায়ের জন্য কাঁদছে। মায়েরা যখন বলছেন, ‘‘সন্তানকে দেখতে চাই’’, মার্কিন অফিসারেরা উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘আর কোনও দিন তোমরা তোমাদের সন্তানকে দেখতে পাবে না। তোমাদের এর পর আর কোনও পরিবার থাকবে না।’’

সীমান্তে ধরা পড়া মানুষদের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোর্টে লড়ছেন আইনজীবী লি জেলার্ন্ট। তিনি জানালেন, রিপোর্টে প্রকাশিত সংখ্যাটা আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুদের সঠিক সংখ্যাটা আসলে কেউ জানে না। কারও কাছে কোনও সঠিক তথ্য নেই। গত সপ্তাহে খোদ প্রেসিডেন্ট নাকি ডেমোক্র্যাটদের বলেছিলেন, মায়েদের থেকে শিশুদের আলাদা করার এই নীতি পাল্টাতে কিছু করা উচিত।

মুখে বলছেন বটে, তবে নিজের তৈরি করা আইনের জন্যই যে শরণার্থী শিশুদের এই হাল, তা মানতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Donald Trump United States ডোনাল্ড ট্রাম্প
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy