Advertisement
E-Paper

কিছু ঠিক হওয়ার নয়, জানে খুদে অ্যালেক্সও

দ্বিতীয় দলে পড়ে অ্যালেক্স। জন্ম থেকে নরওয়াকেই সে। ১৯৯৯ সালে তার মা, নোরা চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। লিটল মেক্সিকোর প্রতিটি কোণ চেনা অ্যালেক্সের। তার ১২ বছরের স্মৃতিতে শান্তিপূর্ণ জায়গাটা এক পলকে পাল্টে যায় দিন ১৫ আগে। চার দিকে পচা ফুলের স্তূপ, জঞ্জালের ক্যান উপচে পড়ছে। অনেক ট্রেলারে লোকজন উধাও। সামনে ছ়ড়িয়ে কচিকাঁচার খেলনা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৩
ক্ষণিক-খেলা: বন্ধুদের সঙ্গে অ্যালেক্স (মাঝখানে)।

ক্ষণিক-খেলা: বন্ধুদের সঙ্গে অ্যালেক্স (মাঝখানে)।

সপ্তাহ দুয়েক আগে হানা দিয়েছিল ওরা। মাকে তখনই নিয়ে চলে যায়। তার পর থেকে অস্থায়ী ট্রেলারের বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছে বছর বারোর ছেলেটা। অ্যালেক্স গ্যালভেজ়। দরজায় কেউ ধাক্কা মেরে খাবার দিয়ে গিয়েছে। তবু অ্যালেক্সের মুখে, ‘‘আমি যাব না।’’

আঠারো বছরের দিদি এস্তেফানি বলে যাচ্ছেন, ‘‘কিন্তু যেতে হবে তো। আমরা তো সারাক্ষণ এখানে লুকিয়ে থাকতে পারব না। আমায় তো কাজে যেতে হবেই।’’ মার্কিন অভিবাসন-শুল্ক এনফোর্সমেন্ট দফতরের (আইসিই) লোকজন যে দিন ওহায়োর নরওয়াকের এই ঠিকানায় হানা দিয়েছিল, তার পর থেকে এ রকমই চলছে।

সমস্যাটা শুধু মেক্সিকো সীমান্তে নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই বলুন, তিনি বিচ্ছিন্ন পরিবার দেখতে চান না— একই সঙ্কট চলছে দেশের অন্দরেও। ‘অনথিভুক্ত’ বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে সন্তানদের। গত কয়েক মাসে আইসিই তিন বার হানা দিয়েছে এমন সব জায়গায়। ওহায়োর গ্রামীণ এলাকার একটি নার্সারিতে কর্মরত ১১৪ জন মালি এবং অন্যান্য কর্মীকে আটকে করে প্রত্যর্পণের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এঁরা সবাই নরওয়াকের ট্রেলার পার্কে বহু দিনের বাসিন্দা। ৭৪টি বাড়ির এই ছোট জায়গাকে বলা হয় ‘লিটল মেক্সিকো।’ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের দাবি, এখন এখানে ৯০ জনেরও বেশি শিশুদের বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এক জন রয়েছেন সঙ্গে। আর ২০ জনের বাবা-মা আলাদা হয়ে গিয়েছেন।

দ্বিতীয় দলে পড়ে অ্যালেক্স। জন্ম থেকে নরওয়াকেই সে। ১৯৯৯ সালে তার মা, নোরা চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। লিটল মেক্সিকোর প্রতিটি কোণ চেনা অ্যালেক্সের। তার ১২ বছরের স্মৃতিতে শান্তিপূর্ণ জায়গাটা এক পলকে পাল্টে যায় দিন ১৫ আগে। চার দিকে পচা ফুলের স্তূপ, জঞ্জালের ক্যান উপচে পড়ছে। অনেক ট্রেলারে লোকজন উধাও। সামনে ছ়ড়িয়ে কচিকাঁচার খেলনা।

লিটল মেক্সিকোর পাঁচ জনকে ইতিমধ্যেই প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। আর ৩৪ জন এখন আটক রয়েছেন অভিবাসী কেন্দ্রে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন অ্যালেক্সের মা-ও। আইসিই হানা দিয়েছে শুনে সেই রাতে ওহায়ো থেকে বেশ কিছু মানুষ পালিয়ে যান। যাঁরা এখনও রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা কাজ হারিয়েছেন। কেউ আবার কাজে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। এক টুকরো ট্রেলারে আলোও নেই। বিল দেওয়া হয়নি অনেকের।

অ্যালেক্সের কথায়, ‘‘এটা এখন ভূতের শহর।’’ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা আসছেন-যাচ্ছেন। খাবার দিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘তুমি কি একা?’’ অ্যালেক্স বলে, ‘‘দিদি আছে। আমরা ঠিক আছি। কিছু চাই না।’’ জিজ্ঞাসাকর্তা বলেন, ‘‘তোমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে, ভাবা যায় না।’’ অ্যালেক্সের নি র্লিপ্তজবাব, ‘‘ভাববেন না। এখানে আগেও এমন হয়েছে।’’

ছেলেটা শুধু অবাক একটা জিনিস শুনে। ট্রাম্পের জ়িরো টলারেন্স নীতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে সে শুনেছে, আমেরিকা এত অমানবিক কখনও ছিল না। অ্যালেক্সের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলে।

সে যখন মাত্র তিন বছরের, তার বাবাকে ফেরত পাঠানো হয় মেক্সিকোয়। তার পর থেকে আর বাবাকে দেখেনি সে। সে যখন আট, একদিন বাজার সেরে ফেরার পথে নোরা আর তাকে আইসিই প্রতিনিধি আটক করেন। শেষমেশ অপরাধের কোনও রেকর্ড না পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মা-ও অ্যালেক্সের কাছে নেই এখন। এক দিন কোনওমতে ফোনে কথা হয়েছে। এস্তেফানি মাকে ভরসা দিয়েছেন, ভাইকে ভাল রাখবেন। অ্যালেক্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে রে।’’ ছেলেটা শুধু বলেছে, ‘‘এটা বোলো না। এটা বোধ হয় ঠিক নয়।’’

Alex Galvez ICE Raids Immigration Norwalk Ohio
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy