এখানকার প্রবাসীরা দেশে যাওয়ার সময়ে উপহার কেনার জন্য এখানকার কোনও জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে সাধারণত অত্যন্ত বিব্রত হন। কারণ, দোকানের বেশির ভাগ জামাকাপড় হয় ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘মেড ইন পাকিস্তান বা ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশ’। দু’দেশের বাণিজ্য সেতুবন্ধনের আনন্দ ঢাকা পড়ে যেত এই চিন্তায় যে, বিদেশ থেকে দেশের জিনিস নিয়ে গেলে দেশে লোকেরা কী ভাববে!
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুমকি দেওয়ার পরে পরপর চারটি বিখ্যাত বিপণি-গোষ্ঠী থেকে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ জিনিস যেন হাওয়ায় উবে গেল। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, এই সব বিপণির কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন যে, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কাপড় তাঁরা আর ব্যবহার করবেন না। অবশ্য তাঁদের দাবি, এটা কখনওই শুল্ক-জনিত সিদ্ধান্ত নয়। এটার কারণ স্বাস্থ্যজনিত, যে হেতু ভারতের একটি বিশেষ বাণিজ্যসংস্থামিশরীয় কটনের পরিবর্তে অন্য অ-মিশরীয় কার্পাস ব্যবহার করছে। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন, এটি ‘সাপ মরল অথচ লাঠি ভাঙল না’— এমন ঘটনা নয় তো?
সম্প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এমন কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ছে। বিভিন্ন স্কুলে এ বার ছাত্র সংখ্যার কমতি চোখে পড়ার মতো। কয়েক জন শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, তা খুবই উদ্বেগজনক। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (সংক্ষেপে ‘আইস’)-এর অফিসারদের ট্রাম্প প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে, তাঁরা যখন হোক স্কুলে ঢুকে বেআইনি অভিবাসী ছাত্রছাত্রীদের চিহ্নিত করতে পারেন। তা ছাড়া, স্কুলবাসের জন্য রাস্তার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত বাচ্চাদেরও চিহ্নিত করতে পারেন এই আইস অফিসারেরা। ফলে বেআইনি অভিবাসীরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না। তা ছাড়া, এইচ১বি ভিসার নতুন নিয়ম-নীতির ফলেও অভিবাসীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। যার ফলে কমছে স্কুলপড়ুয়া অভিবাসী শিশুর সংখ্যাও। সত্যিই এ এক অন্য আমেরিকা।
এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ‘আসন বেশি, পড়ুয়া কম’— এই কথা বলে বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার বহু স্কুল বন্ধের কথা ভাবছে। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই কোভিডের সময় থেকেই। ২০২৫-এ স্কুল শুরু হতে না হতেই আলফারেট্টারএকটি নামী এলিমেন্টারি স্কুলের প্রাক্ প্রাথমিক দু’টি ক্লাস বন্ধ কর দেওয়া হল। তবে শিক্ষকেরা সরকারি কর্মী বলে তাঁদের অন্য একটি স্কুলে কর্মসংস্থান হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হবেই যে, রিপাবলিকান হয়েও আমার এই প্রদেশ, জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষকদের স্বার্থে যথাসম্ভব কাজকরে চলেছেন।
আবার অন্য দিকে, স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ক্লাস শেষ হওয়ার পরে আর কোনও আলোর দিশা দেখতে পাচ্ছেন না। আর যে ক’দিন তাঁদের ভিসার মেয়াদ রয়েছে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন এবং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আইনের পথে হেঁটেই এখানে কোনও কর্মসংস্থান হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বললেন, “চাকরির জন্য অনেক জায়গাতেই আবেদন করছি। এক বছরের স্টুডেন্ট ভিসা থাকাকালীন এইচ১বি ভিসা না পেলে পিএইচ ডি প্রোগ্রামে আবেদন করব।” সদ্য এইচ১বি ভিসা পাওয়া এক ছাত্রের কথায়, “ছ’বছর থাকতে পারব এই ভিসায়। এর মধ্যে আই-১৪০ ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়াও (গ্রিন কার্ডের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ) শেষ করে রাখছি।”
সরকারি তথ্য বলছে, গ্রিন কার্ডের জন্য এখন আবেদন করলে তা পেতে এক জন ভারতীয়ের দেড়শো বছর লেগে যাবে! অন্য দিকে, ৮ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করে গ্রিন কার্ড নেওয়া তো আর সকলের পক্ষেসম্ভব হয় না।
ফলে পড়ে থাকে ধাপে ধাপে, বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ভিসার জন্য আবেদন করা এবং আশায় বুক বেঁধে থাকা। কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে আতঙ্কও। গাড়ি একটু জোরে চালানোর মতো ট্রাফিক নিয়ম ভাঙলেই যদি ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয় এ দেশের পুলিশ-প্রশাসন?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)