Advertisement
E-Paper

ইমপিচ ভোটের প্রস্তুতি, ‘দাঙ্গার’ হুমকি ট্রাম্পের

৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল-তাণ্ডবের পিছনে থাকা ট্রাম্পের ভূমিকাকে এখনও কড়া ভাষায় সমালোচনা করে চলেছেন পেন্টাগনের শীর্ষ আধিকারিকেরা

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৫
প্রস্তুতি: কংগ্রেসে শুরু হবে ইমপিচমেন্ট ভোট। এক সপ্তাহ আগের মতো ট্রাম্প সমর্থকেরা যাতে আর তাণ্ডব চালাতে না পারে, তাই ক্যাপিটল ভবনেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে সেনাবাহিনী। অধিবেশন শুরুর আগে বিশ্রাম সেখানেই। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে। রয়টার্স

প্রস্তুতি: কংগ্রেসে শুরু হবে ইমপিচমেন্ট ভোট। এক সপ্তাহ আগের মতো ট্রাম্প সমর্থকেরা যাতে আর তাণ্ডব চালাতে না পারে, তাই ক্যাপিটল ভবনেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে সেনাবাহিনী। অধিবেশন শুরুর আগে বিশ্রাম সেখানেই। বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে। রয়টার্স

ইঙ্গিত ছিলই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হটাতে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগে শেষমেশ কিছুতেই রাজি করানো গেল না বিদায়ী আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে। এ দিকে ট্রাম্পও অনড়। ক্যাপিটল-তাণ্ডব নিয়ে ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, ওই ঘটনার ছ’দিন পরে প্রথম বার প্রকাশ্যে এসে ট্রাম্প হুমকির সুরেই বললেন, তাঁকে ইমপিচ করার চেষ্টা হলে আরও বড় হাঙ্গামা হবে দেশে।

ডেমোক্র্যাটরা তবু ইমপিচ-অস্ত্র প্রয়োগে নাছোড়। তাঁদের কাছে এটাই এখন কার্যত শেষ অস্ত্র। প্রস্তাব ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে হাউসে। আজ, বুধবার আমেরিকার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে সভা শুরু হয়। প্রারম্ভিক বক্তৃতার মাধ্যমে ট্রাম্পকে ইমপিচ করা উচিত কি না, সেই বিতর্ক শুরু করেন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বিতর্কের পরে আজই ভোটাভুটি হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে পরে তা নিয়ে সেনেটে শুনানি হবে। সেখানে আবার ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের আধিপত্য। ১৯ তারিখের আগে সেনেট বসার কথাও নয়। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে আসছেন জো বাইডেন। তাই এক দিনে আদৌ ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

কিন্তু এমন একটা টালমাটাল অবস্থাতেও ট্রাম্পের হুমকি এবং তাঁকে লাগাতার সঙ্গত দিয়ে যাওয়া পেন্সের মনোভাবই চিন্তা বাড়াচ্ছে। বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে দেশের সব প্রদেশের রাজধানীতে যে ট্রাম্প-সমর্থকেরা সশস্ত্র তাণ্ডব চালাতে পারে, গত কালই তা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে এফবিআই। ওয়াশিংটনে হাজার পনেরো বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হবে বলেও সূত্রের খবর। ট্রাম্প নিজেই রাজধানী শহরে ২৪ তারিখ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারির অনুমতি দিয়েছেন। এর মধ্যে আবার নিজের মেয়াদের শেষ সরকারি বিদেশ সফর বাতিল করেছেন ট্রাম্পের বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। ব্রাসেলসে ন্যাটো-প্রধান এবং বেলজিয়ামের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল তাঁর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের শপথ ঘিরে ফের হাঙ্গামার আশঙ্কাতেই সফর বাতিল করলেন পম্পেয়ো। যদিও বিদেশ দফতর বলছে, এই সিদ্ধান্ত বাইডেনের হাতে সুষ্ঠু ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বার্থেই! শুধু পম্পেয়ো নয়, দফতরের আরও বেশ কয়েক জন কর্তার সফরও বাতিল করা হয়েছে।

সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগে ‘অযোগ্য’ ট্রাম্পকে হটানোর ব্যাপারে পেন্সকে রাজি করানো না-গেলেও ডেমোক্র্যাটরা চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। ভোটাভুটি শুরুর আগেই হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে লেখা চিঠিতে পেন্স বলেন, ‘‘এ ভাবে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনও মানেই হয় না। আমার বিশ্বাস, এতে দেশের ভাল হতে পারে না।’’ পেন্সকে দিয়ে যে তাঁকে হটানো যাবে না, ট্রাম্প যেন তা জেনেই কাল মন্তব্য করেন, ‘‘সংশোধনী প্রয়োগের মতো ভোঁতা অস্ত্রে আমার কোনও ঝুঁকিই নেই। কিন্তু বাইডেন যেন ভুলে না যান যে এই অস্ত্রই কিন্তু ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে। তাই এ বার তাঁর সতর্ক হওয়ার পালা।’’ তবে হাউসে ভোটের মাঠে পাঁচ জন রিপাবলিকান নেতা ডেমোক্র্যাটদের সুরে সরব হবেন, ট্রাম্পকে সরাসরি ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলবেন, সেটা বোধ হয় পেন্সরা আন্দাজ করতে পারেননি। পেন্সের চিঠির পরেও সংশোধনীর প্রয়োগের পক্ষে ২৩৫-২০৫ ভোটে জিতলেন বিরোধীরা। কিন্তু পেন্স রাজি না-হওয়ায় আপাতত এ নিয়ে এগোনো যাবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এই মুহূর্তে তাই ইমপিচ-ভোট আর শপথগ্রহণের দিনে হাঙ্গামার আশঙ্কাই ভাবাচ্ছে দেশের একটা বড় অংশকে। তবু মন্দের ভাল, কাল টেক্সাসে খানিকটা সুর নরম করেই ট্রাম্প সমর্থকদের বলেন, ‘‘টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে আমাদের শান্ত থেকে দেশের ক্ষত মেরামতিতে মন দেওয়া উচিত। আপনারা দেশের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলুন। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন।’’ এক বিবৃতিতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি, ‘‘আমার আবেদন, কোনও হিংসা নয়, আইনভঙ্গ নয়, কোনও তাণ্ডব নয়। আমি এ ধরনের ঘটনা চাই না।তবে ভোটে কারচুপি এবং তাঁকে অবৈধ ভাবে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ থেকে এক চুলও সরতে নারাজ তিনি।

৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল-তাণ্ডবের পিছনে থাকা ট্রাম্পের ভূমিকাকে এখনও কড়া ভাষায় সমালোচনা করে চলেছেন পেন্টাগনের শীর্ষ আধিকারিকেরা, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের সদস্যেরা। ট্রাম্প কিন্তু একটি বারের জন্যও এ নিয়ে অনুতাপ প্রকাশ করেননি। ট্রাম্পের জীবনীকার টিম ও’ব্রায়েন এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘এটাই তো স্বাভাবিক। ট্রাম্পের বাবা তাঁর ছেলেকে এমন ভাবে মানুষ করেছেন, যাতে তিনি শুধু দু’ধরনের মানুষ দেখেন— জয়ী কিংবা পরাজিত। ট্রাম্প কিছুতেই নিজেকে পরাজিতের দলে দেখতে যান না। তাই ভুল করেও ক্ষমা চাওয়া ট্রাম্পের ধাতে নেই।’’

Donald trump Impeachment US Capitol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy