ফাইল চিত্র।
আমেরিকা-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে একহাত নিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ‘‘আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের একাধিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। যার বেশ কয়েকটি আমেরিকার স্বার্থ-বিরোধী।’’ সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। ব্লিঙ্কেনের এই বক্তব্যকে ‘অজ্ঞানতাপ্রসূত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইমরান। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখল করার পরে এই প্রথম কোনও আমেরিকান তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘এতখানি অজ্ঞানতাপ্রসূত মন্তব্য আগে কোনও দিন শুনিনি।’’
ব্লিঙ্কেনের মন্তব্য থেকে শুরু করে বাইডেন প্রশাসন এবং সার্বিক ভাবে আমেরিকার আফগান-পাক নীতিরই কড়া সমালোচনা করেছেন ইমরান। সেই সঙ্গে তালিবানকে ‘আরও সময়’ দিয়ে তাদের ঠিক পথে এগোতে ‘উৎসাহ’ দেওয়াটাই আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন।
ইমরানের কথায়, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানকে ‘ভাড়া করা বন্দুকের’ মতো ব্যবহার করেছে। ‘‘ধরে নেওয়া হয়েছিল, আফগানিস্তানে জেতাবে পাকিস্তান। কিন্তু সেটা পারা যায়নি।’’ অন্যের যুদ্ধ লড়তে গিয়ে তিনি নিজের দেশকে ধ্বংস করার পক্ষপাতী নন, জানিয়েছেন ইমরান। মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকাকে সাহায্য করতে গিয়ে পাকিস্তানকে বহু জঙ্গিগোষ্ঠীর নিশানা হতে হয়েছে। হাজার হাজার পাক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে ‘মিত্ররাষ্ট্র’ আমেরিকাও পাকিস্তানে ৪৮০ বার ড্রোন অভিযান চালিয়েছে।
ইমরানের দাবি, সামরিক ভাবে যে আফগানিস্তান জেতা যাবে না, সেটা তিনি বারবারই বলেছিলেন। আমেরিকাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আফগানিস্তানে মজবুত অবস্থানে থাকতে থাকতে তালিবানের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসা উচিত।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ৩১ অগস্টের মধ্যে সেনা অপসারণের ব্যাপারে অনড় ছিলেন, ইমরান প্রথম থেকেই তার সমালোচনা করে এসেছেন। বাইডেনের সঙ্গে এর মধ্যে তাঁর কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমার ধারণা উনি ব্যস্ত! তবে পাক-আমেরিকান সম্পর্ক একটা ফোনের উপরে নির্ভর করে না।’’ এ কথা বলার সঙ্গে, পাকিস্তানে জঙ্গিরা নিরাপদ ঘাঁটি পাচ্ছে বলে বারবার যে অভিযোগ উঠছে, তার তিরও ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন ইমরান। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পাক-আফগান সীমান্তে আমেরিকান ড্রোনের তীক্ষ্ণতম নজরদারি
ছিল। জঙ্গি ঘাঁটি থাকলে তারা জানতেই পারত!’’
অন্তর্বর্তী তালিবান সরকার সম্পর্কে ইমরান আরও সময় দেওয়ার কথা বলেছেন। মানবাধিকার, নারীর অধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে বাইরে থেকে মত চাপিয়ে দেওয়ার বদলে আফগানিস্তানে ত্রাণ এবং অনুদান এগিয়ে দিয়ে তালিবানকে ঠিক পথে চলার জন্য উৎসাহ এবং চাপ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ইমরানের কথায়, ‘‘মানুষ কোনও পুতুল সরকার মেনে নেবে না। ফলে বাইরে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে ত্রাণ-অনুদানের পরিসরকে চাপ বাড়ানোর কাজে লাগানো উচিত। তালিবানকে উৎসাহ দেওয়া উচিত, যাতে তারা সবাইকে নিয়ে সরকার গড়ে। বাইরে থেকে কেউ আফগান মেয়েদেরও অধিকার পাইয়ে দিতে পারবেন না। সময় দিলে আফগান মেয়েরা নিজেরা অধিকার আদায় করবেন।’’ ইমরানের মতে, তালিবান যদি সব গোষ্ঠীকে একত্র করতে পারে, তা হলে ৪০ বছর পর আফগানিস্তান শান্তির খোঁজ পাবে। না হলে আবার একটা বিপুল সঙ্কটের জন্ম হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy