Indian entrepreneur Dean Mahomed conquered Europe with his shampooing and hukah dgtl
sake dean mohamet
স্পা আর রান্না দিয়ে ২৬০ বছর আগে ব্রিটেন জয় করেছিলেন এই ভারতীয় ক্ষৌরকার
১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে নিজের মালিশখানা খুললেন দীন মহম্মদ। প্রচার করলেন, কবোষ্ণ জলে ভারতীয় ওষধি মিশিয়ে এই মাসাজে গেঁটে বাত-সহ অনেক রোগব্যাধি পালায়। অল্প ক’দিনেই ফুলেফেঁপে উঠল তাঁর কারবার। হাসপাতালও তাঁর কাছে রোগী রেফার করত! আজ যেখানে বিখ্যাত কুইন্স হোটেল, সেখানেই ছিল দীন মহম্মদের অভিজাত স্পা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
রূপচর্চা ও ফ্যাশনের সব কৃতিত্ব আজ ফরাসিদের দখলে। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে শেখ দীন মহম্মদের কথা। ২৬০ বছর আগে জন্মানো এই ভারতীয়র হাত ধরে রূপচর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছিল ইউরোপ। গত বছর তাঁর নাম ফের ভেসে ওঠে গুগলের স্মরণের দৌলতে।
০২১৯
আজকের পটনা ব্রিটিশ ভারতে ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অংশ। সেখানেই ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম শেখ দিন মহম্মদের। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন।
০৩১৯
বক্সারের এক ছোট্ট গ্রাম থেকে এসে পটনায় থাকতে শুরু করেছিলেন দীন মহম্মদের বাবা। তাঁদের পারিবারিক পেশা ছিল ক্ষৌরকর্ম। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে নিযুক্ত ছিলেন দীনের বাবা। কোম্পানিই পিতৃহীন বালক দীনের দায়িত্ব নেয়।
০৪১৯
কোম্পানির এক অ্যাংলো আইরিশ সেনা আধিকারিক গডফ্রে ইভান বেকারের কাছে শিক্ষানবিশ ছিলেন দীন। মরাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন দীন মহম্মদ। বংশগত পেশা ছিলই, তার উপর যুদ্ধের ময়দানের অভিজ্ঞতা। সেই সময় পেশার তাগিদেই দীন মহম্মদ ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করলেন ক্ষার ও ক্ষারীয় পদার্থ নিয়ে। এই চর্চা পরবর্তী জীবনে তাঁর চলার পথ ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
০৫১৯
ব্রিটিশদের প্রতি দায়বদ্ধ দীন মহম্মদের চোখে পড়েছিল বাংলার তৎকালীন অভিজাত মুসলিমদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। পলাশির যুদ্ধের পরে বাংলার মসনদে তখন মীর জাফরের জামাই মীর কাশেম। তিনি ব্রিটিশদের হাতের পুতুল। বয়সে ছোট হলেও বুদ্ধিমান দীন মহম্মদ আঁচ করতে পারলেন ভবিষ্যত্।
০৬১৯
১৭৭২ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেন গডফ্রে সাহেব। কয়েক বছর পরে তাঁর সঙ্গে বিদেশে পাড়ি দিলেন দীন মহম্মদও। আর কোনওদিন ফিরে আসেননি দেশে। সাগর পাড়ি দেওয়ার পথে লিখে ফেললেন বই। তার নাম ‘দ্য ট্র্যাভেলস অফ দীন মহম্মদ।’ চেঙ্গিজ খান, তৈমুর লং আর বাবরের প্রশংসা সে বইয়ের পাতায় পাতায়।
০৭১৯
অষ্টাদশ শতকের সেই ইউরোপে ‘নাবোব’ শব্দ প্রচলিত হয়েছিল। ‘নবাব’ থেকেই এর উঠপত্তি। এই শব্দ বোঝাতো ধনী ও সম্ভ্রান্ত ইউরোপীয়দের। জনৈক নাবোব বেসিলের কাছে কাজ নিলেন দীন মহম্মদ। গডফ্রের উপর নির্ভর না করে নিজেই নিজের পথ দেখলেন।
০৮১৯
পোর্টম্যান স্কোয়্যারে নিজের বাড়িতে একটি স্নানঘর তৈরি করিয়েছিলেন নাবোব বেসিল। যেখানে অর্থের বিনিময়ে উষ্ণ বাষ্পীয় ভাপে নিজের পরিচর্যা করা যেত। অর্থাৎ আজকের স্পা-এর আগের সংস্করণ।
০৯১৯
বুদ্ধিমান দীন মহম্মদ স্নানঘরকে করে দিলেন ‘ওষধিঘর’। শুরু করলেন শ্যাম্পুয়িং। ইউরোপে তখন ‘শ্যাম্পুই’ বা ‘শ্যাম্পুয়িং’ বলতে বোঝাত ভারতীয় মাসাজ বা মালিশকে।
১০১৯
১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে নিজের মালিশখানা খুললেন দীন মহম্মদ। প্রচার করলেন, কবোষ্ণ জলে ভারতীয় ওষধি মিশিয়ে এই মাসাজে গেঁটে বাত-সহ অনেক রোগব্যাধি পালায়। অল্প ক’দিনেই ফুলেফেঁপে উঠল তাঁর কারবার। হাসপাতালও তাঁর কাছে রোগী রেফার করত! আজ যেখানে বিখ্যাত কুইন্স হোটেল, সেখানেই ছিল দীন মহম্মদের অভিজাত স্পা।
১১১৯
রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও ষষ্ঠ উইলিয়ামেরও ব্যক্তিগত ম্যাসিয়োর ছিলেন দীন মহম্মদ। অবশ্য তাঁর পোশাকি নাম ছিল ‘শ্যাম্পুয়িং সার্জেন’। বিদেশের মাটিতে এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
১২১৯
দীন মহম্মদের বিয়েও এক দুঃসাহসিক অভিযান। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে গডফ্রে সাহেব গিয়ে পৌঁছেছিলেন নিজের জন্মভূমি আয়ারল্যান্ড। তাঁর সঙ্গে নতুন দেশে পা রেখেছিলেন দীন মহম্মদ। কিন্তু তাঁর ইংরেজি তখনও কেতাদুরস্ত হয়নি।
১৩১৯
ইংরেজি ঘষামাজার জন্য দীন মহম্মদ অভিজাত আইরিশ পরিবারের সঙ্গে মিশতে শুরু করলেন। আলাপ হল সম্ভ্রান্ত জেন ড্যালির সঙ্গে। ক্রমশ আলাপ থেকে প্রণয়। কিন্তু দীনের মতো সাধারণ ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিল না জেনের পরিবার।
১৪১৯
জেন ড্যালি ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান। তাঁকে বিয়ে করার জন্য দীন মহম্মদ নিজেও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেন। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে বিয়ের পরে উনিশ শতকের গোড়ায় দু’জনে এলেন ইংল্যান্ডে। আজীবন দীন মহম্মদের পাশে সর্বতোভাবে ছিলেন তাঁর স্ত্রী জেন।
১৫১৯
মধ্য লন্ডনের জর্জ স্ট্রিটে রোস্তোরাঁ খুলেছিলেন দীন মহম্মদ। নাম দিয়েছিলেন ‘হিন্দোস্তান কফি হাউজ’। ভারতীয় খাবারের সঙ্গে ছিল হুকাহ। খাঁটি ভারতীয় তামাকের স্বাদে মজতেন ব্রিটিশরা। পরে অবশ্য আর্থিক কারণে এই কফি হাউজ বন্ধ হয়ে যায়।
১৬১৯
দীন-জেনের ছয় সন্তান। রোজান্না, হেনরি, হোরেশিয়ো, ফ্রেডেরিক, আর্থার এবং দীন মহম্মদ জুনিয়র। এঁদের মধ্যে আর্থার লন্ডনে টার্কিশ বাথ-এর ব্যবসা চালাতেন। এ ছাড়াও ছিলেন একজন দক্ষ জিমন্যাস্ট।
১৭১৯
দীন মহম্মদের এক নাতি ফ্রেডেরিক হেবরি হোরেশিয়ো আকবর মহম্মদ ছিলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক। রক্তচাপ নিয়ে তিনি বিস্তারিত গবেষণা করেছিলেন। আর এক নাতি জেমস কোরিয়ান মহম্মদ উনিশ শতকের শেষ দিকে সাসেক্সের হোভ-এর ভিকার পদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
১৮১৯
কোনও কোনও গবেষকের দাবি, খ্রিস্টান সমাজের রীতি ভেঙে দীন মহম্মদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন জেন জেফ্রিজকে। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম অ্যামেলিয়া।
১৯১৯
কিছুটা হলেও পরবর্তী প্রজন্মের কৃতিত্বের সাক্ষী হতে পেরেছিলেন দীন মহম্মদ। তিনি প্রয়াত হন ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে, ৯২ বছর বয়সে। লন্ডনের সেন্ট নিকোলাস গির্জায় আছে তাঁর সমাধি। সিপাহি বিদ্রোহেরও আশি বছর আগে তিনি ব্রিটেন জয় করেছিলেন। আজ কোথায় হারিয়ে গিয়েছে ঝুঁকি নিতে ভালবাসা এই ভারতীয়ের নাম।