E-Paper

বাংলাদেশে আইএসআই: অসম-সহ উত্তর পূর্বে অশান্তি তৈরিই লক্ষ্য পাক গুপ্তচর সংস্থার

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (স্বাধীন)-এর কয়েক জন নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন বলে একাধিক সূত্রে খবর এসেছে।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩২
পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এর ফলে পাকিস্তানের হাতে চলে আসতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এর ফলে পাকিস্তানের হাতে চলে আসতে পারে। —প্রতীকী চিত্র।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে যাওয়া সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর এক জন প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা (স্বাধীন)-এর কয়েক জন নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন বলে একাধিক সূত্রে খবর এসেছে। ভারতের গোয়েন্দারা মনে করছেন, অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ফের সন্ত্রাসবাদ ও হিংসার আগুন জ্বালানোর সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা আইএসআই-এর রয়েছে। অতীতে পরেশের নেতৃত্বে আলফা-ইউত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জঙ্গিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ হত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম কোনও এলাকায়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেনা অভিযান চালিয়ে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি ভেঙে দেন। ফের তেমন কিছুর পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে ভারতের গোয়েন্দাদের ধারণা।

একটি সূত্রের দাবি, বর্তমানে চিনের ইউনান প্রদেশের বাসিন্দা পরেশ নিজে বাংলাদেশের এই আলোচনায় ছিলেন। তবে অন্য সূত্রগুলিতে এই খবরের সত্যতা মেলেনি। আলফা-র নেতা নয়ন মেধী বর্তমানে চট্টগ্রামে। তিনি পাক গুপ্তচর বাহিনীর কর্তার সঙ্গে আলোচনায় থাকতে পারেন বলে খবর। এ দিন পাকিস্তানি সামরিক প্রতিনিধিদলটি চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারে যায়। সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের প্রশিক্ষণে তৈরি রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসা-র সঙ্গে যোগাযোগের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তবে ভারতের গোয়েন্দাদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নিয়ে বোঝাপড়া। বাংলাদেশ সেনার প্রতিনিধিদলের পাকিস্তান সফরের সময়েই এ বিষয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছিল। তা অনেকটাই চূড়ান্ত হয়েছে পাকিস্তান সেনার এই পাল্টা সফরে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এর ফলে পাকিস্তানের হাতে চলে আসতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়েও চিন্তা বাড়ছে। এই সব সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানের হাত ঘুরে চিনের কাছেও পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।

পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলটির সফর নিয়ে বাংলাদেশ সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছে। বাংলাদেশের ইউনূস সরকার শয়ে শয়ে জেহাদি জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ায় সীমান্তে বাড়তি নজরদারির বন্দোবস্ত করছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যে সব জায়গায় নানা কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি, সেখানে অস্থায়ী ভাবে হলেও মানুষ পারাপারে বাধা সৃষ্টির মতো কিছু ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানীয় ভারতীয় নাগরিকেরা একে সমর্থন করলেও বাংলাদেশের মানুষ বহু ক্ষেত্রে অশান্তি তৈরি করছে বলে জানা গিয়েছে। আরও দাবি, তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ভারতের গোয়েন্দারা দেখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার যে সব জায়গায় অশান্তি তৈরি করে কাঁটাতার বসানোয় বাধা দেওয়া হচ্ছে, প্রতিটি জায়গাই চোরাচালানের পথ হিসাবে পরিচিত। আইএসআই দলের সফরের পরে এই অশান্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে জালনোট পাচারের পরিকল্পনারও বাস্তবায়ন করা হতে পারে। কারণ, চোরাচালানের একটা বড় অর্থ বরাবর ব্যবহার হয় জেহাদি ও জঙ্গি সংগঠনের কাজে।

বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলটিতে আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক রয়েছেন বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। রয়েছেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল অ্যানালিসিস (ডিজি এ) মেজর জ‌েনারেল শহিদ আমির আফসার, যিনি আবার চিনে সামরিক অ্যাটাসে হিসাবে মোতায়েন ছিলেন। চিনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভাল। শিলিগুড়ির কাছে ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত অপরিসর জায়গাটি বাকি দেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগসূত্র। ইউনূস সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই এই ‘চিকেন’স নেক’ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়ে আসছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ভারত-বিরোধীরা।চিন ও পাকিস্তান তাদের জিগিরে আকর্ষিত হয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। এর আগে ২০০৯-এ ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পরে তদন্তে বাংলাদেশ সেনা-গোয়েন্দাদের সাহায্য করার জন্য শেষ বার ঢাকায় এসেছিল আইএসআই-এর একটি দল। তার পরে এই প্রথম। কিন্তু পাকিস্তান যে ভাবে সামরিক প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে একাধিক শীর্ষ স্তরের আইএসআই কর্তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছে, তাতে সামরিক সহযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে ‘শায়েস্তা’ করার বিষয়ে কালক্ষেপ না-করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে বলে নিশ্চিত গোয়েন্দারা।

বন্ধু দেশগুলিকে নিয়ে পাকিস্তানের নৌবাহিনী ২ বছর অন্তর করাচিতে একটি মহড়ার আয়োজন করে। ‘আমন-২৫’ নামে মার্চের এই মহড়ায় এই প্রথম অংশ নিতে চলেছে বাংলাদেশের নৌবাহিনীও। পাকিস্তানি দলটির ঢাকা সফরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ISI India Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy