প্রতিদিন সময় করে পুরো দেহ পরিষ্কার করিয়ে, নতুন পোশাক বদলানো হয়। প্রিয়জনদের যাতে কখনও মনে না হয় যে, তাঁদের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন না পরিবারের বাকি সদস্যেরা। খুব খেয়াল রাখা হয় এই বিষয়টাতে। প্রত্যেকেই তাঁর সময়মতো কফিনের ঢাকনা খুলে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্পও করেন। কফিনে শুয়ে থাকা প্রিয়জনের কাছ থেকে অবশ্য কোনও উত্তর মেলে না।
এই ভাবে কোনও পরিবার এক সপ্তাহ, কোনও পরিবার একমাস আবার কেউ কেউ এক বছরও প্রিয়জনকে এ ভাবে নিজের কাছে রেখে দেন। যাঁর সামর্থ্য যত বেশি, তিনি তত বেশি দিন নিজের কাছে ওই মৃতদেহ রেখে দেন। কারণ মৃতদেহ ভাল করে সংরক্ষণ করাটা জরুরি তা না হলে পচে-গলে যাবে। আর সেটা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। তার জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়।
এর পর আসে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর্ব। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য হল, মোষ বলি। টোরাজাদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর মোষই তাঁদের স্বর্গের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। মোষের পিঠে চেপেই তাঁরা স্বর্গলোকে যান। একজন মৃত ব্যক্তির জন্য অন্তত একটা মোষ বলি দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। একটা মধ্যবিত্ত পরিবার একজনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ২৪টা মোষের বলি দেয়। সামর্থ্য থাকলে বলির সংখ্যা আরও বাড়ে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই প্রক্রিয়াকে টোরাজারা বলেন রাম্বু সোলো। তাদের কাছে প্রথম বলি দেওয়া মোষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অর্থ হল, প্রিয়জনেরও মৃত্যু। আর তারপর যত বেশি সংখ্যক মোষের বলি দেওয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি আত্মা স্বর্গে পৌঁছতে পারবে। গরীব পরিবার, যাদের অনেক মোষ কেনার সামর্থ্য নেই, তারা একটি মোষেরই বলি দেয়। টোরাজাদের বিশ্বাস অনুসারে এর অর্থ, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করল ওই একটি মোষের বলি কিন্তু তাঁর আত্মা স্বর্গে না পৌঁছতেও পারে।
টোরাজারা যে দীর্ঘ সময় মৃতদেহ বাড়িতে রেখে দেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে তার পিছনে অন্য একটি কারণও রয়েছে। তাঁদের মতে, টোরাজারা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া খুব ঘটা করে পালন করেন। তা নাহলে আত্মার স্বর্গযাত্রা হবে না, বিশ্বাস তাঁদের। আর এর জন্য মোষের প্রয়োজন। মোষ কেনার টাকা এবং অন্ত্যেষ্টিরীতির আনুষাঙ্গিক খরচ জমানোর জন্যই তাঁরা এতদিন মৃতদেহ বাড়িতে রাখেন। বলি দেওয়ার পর মোষের মাংস উপস্থিত আত্মীয় পরিজনদের খাওয়ানো হয়।
কিন্তু তার পরও প্রিয়জনকে ‘ভুলে’ যান না তাঁরা। বছরে একবার সমস্ত আত্মীয়-পরিজন সেই গুহার কাছে জড়ো হন, কফিন থেকে মৃতদেহ তুলে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরানো হয়, খাওয়ানো হয়। এভাবেই তাঁদের সম্মান জানানোর রীতি চলতে থাকে। টোরাজাদের বিশ্বাস, মৃতদের প্রতি সম্মান জানালে তাঁদের আয়ু বাড়বে এবং সৌভাগ্য বজায় থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy