পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে আগেই ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলিও একই পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। তবে ইরান আবারও স্পষ্ট করল, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই! অন্য দিকে, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার বিষয়টিও স্পষ্ট করলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তিনি জানান, আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!
বহু বছর ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে সরব আমেরিকা। গোপনে পরমাণু গবেষণা চালাচ্ছে ইরান, এই অভিযোগ বরাবরই তুলে এসেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ। গত জুনে ইজ়রায়েলের সঙ্গে ইরানের সামরিক সংঘাতে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানে হামলা চালায় আমেরিকা। ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রের উপর বিমান হামলা এবং বোমাবর্ষণ করা হয়। সেই থেকে নতুন করে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন বাড়ে। তবে আমেরিকা বার বার পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইলেও সেই প্রয়াস সফল হয়নি।
আমেরিকা-সহ বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশগুলির ইরানকে নিয়ে আপত্তির মূলে রয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ! অভিযোগ, ইরান গোপনে পরমাণু কেন্দ্রে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ করছে! যদিও খামেনেইয়ের দাবি, ‘‘অন্য দেশগুলি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে। তবে আমরা আমাদের সমৃদ্ধিকরণ ৬০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি।’’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কথায়, ‘‘আমাদের এই ধরনের অস্ত্র (পারমাণিক অস্ত্র) তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই।’’
শুধু তা-ই নয়, পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন খামেনেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকা আলোচনার আগেই ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছে। তারা চায়, পারমাণিক কার্যক্রম এবং সমৃদ্ধিকরণ বন্ধ করতে। তাই ওদের সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যদি আমরা আলোচনায় রাজি হই তবে পশ্চিমি দুনিয়ার হুমকির মুখে পড়বে ইরান।’’ খামেনেইয়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা ভীত নই। আমরা কারও হুমকির কাছে মাথা নত করব না।’’
আরও পড়ুন:
পরমাণু গবেষণা প্রথম থেকেই অত্যন্ত গোপন রেখেছে ইরান। তাদের সবচেয়ে সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্রটি পাহাড়ের নীচে, মাটি থেকে ৩০০ ফুট গভীরে। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত যার অস্তিত্বই জানা ছিল না কারও। ফলে ইরান এই সংক্রান্ত গবেষণায় কতটা এগিয়েছে, এখনও তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে এখন ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ হচ্ছে ইউরেনিয়াম। অনেকের মতে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। আমেরিকা প্রথম থেকেই চাইছে, ইরানের এই পরমাণু কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে! সেই আবহে আমেরিকার সঙ্গে তাঁরা যে আলোচনায় বসতে রাজি নন, তা আবারও স্পষ্ট করলেন খামেনেই।