Advertisement
E-Paper

ফ্রান্সে হামলার দায় নিল আইএস, তবু সংশয়

উৎসবের রাতকে আতঙ্ক আর কান্নায় বদলে দেওয়া আততায়ী মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল-এর পরিচয় নিয়ে প্রশ্নটা ছিল গোড়া থেকেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নিস হামলার দায় নিলেও ফরাসি তদন্তকারীরা তা উড়িয়ে দেওয়ায় ধোঁয়াশাটা বাড়ল।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:০১
ফুলে ফুলে ঢাকা। নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন যুবক।—রয়টার্স

ফুলে ফুলে ঢাকা। নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন যুবক।—রয়টার্স

উৎসবের রাতকে আতঙ্ক আর কান্নায় বদলে দেওয়া আততায়ী মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল-এর পরিচয় নিয়ে প্রশ্নটা ছিল গোড়া থেকেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নিস হামলার দায় নিলেও ফরাসি তদন্তকারীরা তা উড়িয়ে দেওয়ায় ধোঁয়াশাটা বাড়ল।

বাস্তিল দিবস উদ্‌যাপনের রাতে নিস-এর রাজপথে ট্রাকে পিষে ৮৪ জনকে হত্যার পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট থেকে পুলিশ-কর্তা— সকলেরই দাবি ছিল, এটা আইএস-এর কাজ এবং বুহলেল জঙ্গি। গত দেড় বছরে এই নিয়ে তৃতীয় বার এমন রক্তস্রোত দেখল ফ্রান্স। এর আগের দু’টি ঘটনাতেই আইএস-যোগ মিলেছিল। এ বারের ঘটনাতেও তাই এক রকম নিশ্চিত ছিলেন ফরাসি প্রশাসনের কর্তারা। তা ছাড়া দিন কয়েক আগে জনবহুল এলাকায় ট্রাক বোমা বিস্ফোরণ হতে পারে বলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল আইএস। সেটা দেখার পরে বৃহস্পতিবারের ট্রাক হানার পিছনে আইএস-যোগ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে যান সরকারি কর্তারা।

কিন্তু বুহলেলকে নিয়ে তদন্তের পর পুলিশই বলছে, জেহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই নেই। ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী বার্নার্ড শেজেন্যুভও জানিয়েছেন, এই ঘটনার আগে গোয়েন্দা বিভাগে বুহলেল পরিচিত নাম ছিল না। তবে তার ঘনিষ্ঠদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সে চরমপন্থার দিকে ঝুঁকেছিল। এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে বুহলেলের প্রাক্তন স্ত্রী-সহ পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবারই আইএসের তরফে নিস হামলার দায় স্বীকার করা হয়। আইএস নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদমাধ্যম ‘আমাক’-এর তরফে বুহলেলকে নিজেদের ‘সেনা’ বলেও দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই হামলা? প্রকাশিত বিবৃতিতে আইএস জানিয়েছে, আমেরিকা-সহ যারাই আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জোটবদ্ধ হয়েছে, তাদের জবাব দিতেই এমন হামলা।

কিন্তু তদন্তকারীরা বলছেন, বুহলেলের থেকে আসল পিস্তল মিললেও ঘাতক ট্রাকটি তল্লাশি চালিয়ে যে দু’টি কালাশনিকভ ও একটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে, তা নকল। গত কালই তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ছোটখাটো অপরাধের জন্য পুলিশের খাতায় নাম উঠলেও তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের কোনও অভিযোগ ছিল না।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, তিউনিসিয়ায় জন্মালেও কয়েক বছর আগে ফ্রান্সে গিয়ে বাস করতে শুরু করে বুহলেল। গাড়ির চালক হিসেবেই কাজ করত সে। তার পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, তিন সন্তানের বাবা বুহলেলের মতিগতির কোনও স্থির ছিল না। মদ্যপান ও নারীসঙ্গ ছিল রোজকার ঘটনা। বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও চলছিল তার।

বুহলেলের বাবার দাবিও প্রায় এক। তিনি জানিয়েছেন, বুহলেল মাঝেমাঝেই হিংস্র হয়ে উঠত। রেগে গেলে হাতের সামনে যা পেত, সব ভেঙে ফেলত। এর জন্য ওর চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু গত চার বছরে এক বারও তিউনিসিয়া যায়নি। এমনকী, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি। বুহলেলের ইসলামি যোগ উড়িয়ে দিয়ে তার বাবা বলেন, ‘‘যেটুকু জানি, ও ধর্মস্থানেই যেত না। প্রার্থনাও করতো না। ধর্মের সঙ্গেও তার কোনও যোগই ছিল না। এমনকী রমজানও পালন করতো না সে।’’

কিন্তু ফরাসি জনগণ এখন এ সব নিয়ে নয়, অনেক বেশি চিন্তিত নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তাঁরা ক্ষোভে ফুটছেন। ১৮ মাসে তৃতীয় বড়সড় হামলার পড়ে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ফরাসি জনগণ।

দুর্ঘটনার পর থেকেই নিহতদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সরকারের মুণ্ডপাত করছেন অনেকেই। সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দৃশ্যতই হতাশ তাঁরা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এবং প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্‌সের বিরুদ্ধেও সরব হন তাঁরা। বৃহস্পতিবারের হত্যালীলার সাক্ষী ফ্রান্সের নাগরিক এক যুবকের কথায়, ‘‘এখন বুঝতে পারছি, আমাদের জীবনের কোনও দামই নেই।’

france IS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy