দিন কয়েক পুরনো কাটা মুণ্ড। চোখ-মুখ বোঝার উপায় নেই। কারণ তাতে পচন ধরেছে। আর তাতেই লাথি মারার চেষ্টা করছে একজোড়া খুদে পা। দাঁড়ানোরও বয়স হয়নি তার। কিন্তু তাতে কী? বাবা তাকে দু’হাতে তুলে ওই মুণ্ডতে কী ভাবে লাথি দিতে হয় শেখাচ্ছে। শিশুর মুখে অবুঝ হাসি, আর বাবার মুখে হিংস্র আনন্দ। শত্রুর কাটা মুণ্ড এখন তার ছেলের খেলার জিনিস। আনন্দ তাই ধরছে না ওই আইএস(ইসলামিক স্টেট) জঙ্গির। ছবিটি দেখলে তেমনই মনে হয়। যাঁরা সেটিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন, তাঁদের কারও কারও ধারণা, ছবিটি সম্ভবত সিরিয়ার রাক্কা শহরের। আর কাটা মুণ্ডটি সিরিয়ার কোনও সেনার।
ছবিটির সত্যতা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু যাঁরা আইএসের অত্যাচার সম্পর্কে সামান্য খবরও রাখেন, তাঁরা জানেন এমনটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। রাক্কা শহর দখল করার পর এ ভাবেই যে প্রায় নিঃশব্দে বহু মানুষকে মেরে দিচ্ছে আইএস জঙ্গিরা, তা জানা। আমজনতা থেকে বন্দি সিরীয় সেনাসেই অত্যাচার থেকে বাদ যাচ্ছেন না কেউই। ফি-দিন গণহত্যা চলে সেখানে। রাস্তার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে কাটা মুণ্ড, দেহ। কেউ ফিরেও তাকায় না। তবে শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও যে ভাবে এই হত্যালীলার দর্শক করে আইএস, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে। তারই একটি ছবি সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, হাত-পা বাঁধা মুণ্ডহীন দেহ পড়ে রয়েছে খোলা রাস্তায়। তার কোলেই সাজানো তার কাটা মুণ্ড। আর ঘিরে দাঁড়িয়ে জনাদশেক কিশোর। তবে তাদের নজর অন্য দিকে। যেন কিছু হয়ইনি সেখানে। আসলে ফি-দিন তাদের সামনেই চলে শিরচ্ছেদ অভিযান। তাই এগুলো যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। যেন এটাই স্বাভাবিক। শুধু রাক্কা নয়, ইরাক ও সিরিয়ার যে বিস্তীর্ণ অংশে আইএস-রাজত্ব, সেখানে এটাই প্রতিদিনের ছবি।
এই যেমন সিরিয়ার আনবার প্রদেশের আলবু নিমার উপজাতি সম্প্রদায়ের আরও ৮৫ জনকে হত্যা করল আইএস জঙ্গিরা। শনিবার খবরটি জানিয়েছেন ওই উপজাতিরই এক নেতা। তার আগের দিন ওই উপজাতি-সহ আরও কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০ জনকে গণকবর দিয়েছিল আইএস। পাশাপাশি ইরাক-সিরিয়ার চৌহদ্দি পেরিয়ে বাইরেও হত্যালীলা চালানোর হুমকি দিয়ে চলেছে আইএস। আর সে তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ব্রিটেনের বাসিন্দারা।
এবং এ সমস্ত কিছুই চলতে থাকবে যত ক্ষণ না পর্যন্ত এই ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিহ্ন করা যায়। সে উদ্দেশ্যেই গত দেড় মাস ধরে সিরিয়ার কোবান শহরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দবাহিনী। তাঁদের সাহায্য করার জন্য ইরাকের কুর্দ পেশমেরগা বাহিনী রওনা দিয়েছিল। তুরস্ক হয়ে তাদের কোবান পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু সিরিয়ার কুর্দবাহিনী অভিযোগ করে, তুরস্ক বাধা দেওয়াতেই পৌঁছতে দেরি করছে ইরাকি কুর্দ বাহিনী। তবে এ দিন তারা কোবানে পৌঁছেছে বলে খবর। স্থানীয়দের দাবি, অস্ত্রশস্ত্র, সাঁজোয়া গাড়ি সমেত এসেছে তারা। বাসিন্দাদের আশা, এ বার হয়তো কোবানের লড়াইয়ে কিছুটা বিপাকে পড়বে আইএস। ইতিমধ্যেই কুর্দদের সঙ্গে লড়াইয়ে একশোরও বেশি জঙ্গি মারা গিয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে এক পর্যবেক্ষক সংস্থা। ইরাকি পেশমেরগা বাহিনীর সাহায্যে এ বার কোবান উদ্ধার হয় কিনা সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy