গাজ়া শহর দখলের লক্ষ্যে আক্রমণ আরও বৃদ্ধি করল ইজ়রায়েল। এ বার স্থলপথে গাজ়ার অন্যতম প্রধান জনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও ঢুকে পড়ল ইজ়রায়েলি সেনার কয়েক ডজন ট্যাঙ্ক।
বুধবার ছিল গাজ়ায় স্থলপথে ইজ়রায়েলের আক্রমণের দ্বিতীয় দিন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র একটি প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে গাজ়া শহর দখলের লক্ষ্যে পুরোদমে অভিযান শুরু করে দিয়েছে ইজ়রায়েল। সেনার ট্যাঙ্ক, বুলডোজ়ার এবং সাঁজোয়া গাড়িগুলি উত্তর গাজ়ার শেখ রাদওয়ানে ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, শেখ রাদওয়ান জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা করছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক এবং বুলডোজ়ারগুলি। পিছনে মুহুর্মুহু শোনা যাচ্ছে বোমা-গুলির শব্দ। কখনও গোলাবর্ষণ করে, কখনও আবার ধোঁয়া-বোমা ছুড়তে ছুড়তে এগোচ্ছে সেনার গাড়ি।
গাজ়ায় ইজ়রায়েলের হামলা শুরুর আগে শেখ রাদওয়ানে ছিল কয়েক হাজার মানুষের বাস। গাজ়া শহরের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলির মধ্যে একটি ছিল এই এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বুধবার ইজ়রায়েলি সেনার অনুপ্রবেশের পর থেকে আশপাশের ঘরবাড়ি এবং প্রধান সড়কগুলিতে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। একে স্থলপথে আক্রমণের মহড়া বলে মনে করছেন এলাকাবাসীরা।
বুধবার সকালে পরিবারকে নিয়ে শহর ছেড়ে দক্ষিণে পালিয়ে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সাদ হামাদা। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘‘ড্রোনগুলি আর কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। সৌর প্যানেল, জেনারেটর, জলের ট্যাঙ্ক, এমনকি ইন্টারনেট টাওয়ারও গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। ওখানে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তাই প্রাণের ঝুঁকি সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে শহর ছাড়ছেন বেশির ভাগ মানুষ।’’ এলাকার আর এক বাসিন্দা নিদাল আল-শেরবি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকেই সারা রাত ধরে অবিরাম গোলাগুলি চলছে শেখ রাদওয়ানে। ইজ়রায়েলি সেনা (আইডিএফ)-এর বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ গাজ়া শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। তার মধ্যে অগস্ট মাসের পর থেকে গাজ়া ছেড়েছেন প্রায় ১,৯০,০০০ প্যালেস্টাইনি। এখনও সাড়ে ছ’লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছেন সেখানেই।
এই হামলার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছে ইজ়রায়েল। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ় বলেছেন, ‘‘পণবন্দিদের মুক্তি এবং হামাসের পরাজয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হচ্ছে। জ্বলছে গাজ়া।’’ গাজ়ায় প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের শেষ ঘাঁটি ধ্বংস করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক মহলে ইজ়রায়েলের এই পদক্ষেপের ব্যাপক নিন্দাও শুরু হয়েছে।