E-Paper

২০০টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী বেছে প্রস্তুত জামাত

জামায়াত সূত্রের খবর, গত নভেম্বর, ডিসেম্বরে প্রথম বার এবং গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় বার দলগত ভাবে সমীক্ষা করানো হয়েছে।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৫
নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে ফেলেছে জামায়াতে ইসলামী।

নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে ফেলেছে জামায়াতে ইসলামী। —প্রতীকী চিত্র।

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ফেলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলীয় সূত্রের খবর, অন্তত ২০০টি আসনে তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তবে জোট বা কোনও দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলে শরিক দলের জন্য প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হবে।

সেই সঙ্গে রাজনৈতিক কৌশলেও বদল আনছেন জামাত নেতারাবাংলাদেশের আইনসভার উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর- এটি হল এমন এক নির্বাচন ব্যবস্থা, যেখানে কোনও একটি রাজনৈতিক দল মোট যত শতাংশ ভোট পায়, সংসদের ঠিক তত শতাংশ আসন পায়) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে জামায়াত। ইতিমধ্যেই তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না ভেবে দেখবে। যদিও আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোটের কথা মাথায় রেখে গত জানুয়ারি থেকেই ভোটপ্রচার শুরু করে দিয়েছে তারা।

জামায়াত সূত্রের খবর, গত নভেম্বর, ডিসেম্বরে প্রথম বার এবং গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় বার দলগত ভাবে সমীক্ষা করানো হয়েছে। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে জামায়াত রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের সব, খুলনার ৩৫ আসনের সব, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের ১০-১২টি, বরিশালের ২১ আসনের তিনটি, চট্টগ্রামের ৫৮ আসনের ১২টি, সিলেটের ১৯ আসনের তিনটি, ময়মনসিংহের ২৪টি আসনের দু’টি এবং ঢাকার ৭১ আসনের কয়েকটি-সহ শতাধিক আসনে বিএনপি-র বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে। জানা গিয়েছে, দলের আমির শফিকুল রহমান-সহ প্রথমসারির অনেক নেতাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

জামাতের ঢাকা দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমোন বলেন, ‘‘কিছু আসনে আমাদের প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। তবে এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। সমমনোভাবাপন্ন দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখছি। যদি তা হয়, তা হলে অনেক কিছুই পাল্টাতে পারে। তবে ভোটপ্রচার শুরু করে দিয়েছি।’’ তিনি জানান, আপাতত এলাকায় প্রার্থীদের পরিচয় করানোর কাজটাই করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী শিবিরের জয় জামাতের উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছেন, জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। আব্দুস সাত্তারের কথায়, ‘‘ডাকসুর জয় ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে বলেই মনে করছি।’’

বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ বার একেবারে ভিন্ন। গত বছরের ৫ অগস্টের পরে নির্বিচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। জানা গিয়েছে, স্থানীয় স্তরের অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে জামিনে মুক্ত করতে তৎপর জামাত নেতারা। বহু জায়গায় তাঁরা জামিন করিয়েছেনও। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, লক্ষ্যটা খুব স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে, তা হলে ওই নেতা এবং তাঁর অনুগামীদের ভোট যেন জামাত শিবিরের দিকে আসে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করে তা কিছুটা নিশ্চিত করতে চাইছে জামাত।

রাজনৈতিক কৌশলেও বদল আনতে চাইছেন জামাত নেতৃত্ব। ডাকসুতে জয়ের পরে স্বাধীনতার পর এই প্রথম জামায়াত-সমর্থিত ছাত্রনেতারা ঢাকার রায়েরবাজার গণহত্যা স্মৃতিসৌধে গিয়ে ১৯৭১ সালের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। যা মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জামায়াতের অবস্থানে সম্ভাব্য পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত অনেকের। সূত্রের খবর, কট্টরপন্থী জামায়াতে ইসলামী নতুন ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দুদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে চাইছে তারা। খুব সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৫ জন হিন্দু এই ইসলামপন্থী দলে যোগ দিয়েছেন। জামাত সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মহিলাদের নেতৃত্বে এনে নারীবিরোধী তকমাও কিছুটা মুছতে উদ্যোগী তারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh jamaat e islami

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy