প্রায় সাত দশকের পুরনো এক আইনব্যবস্থা ‘কাফালা’ অবশেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে রদ করল সৌদি আরব সরকার। এই বিতর্কিত ব্যবস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে একাধিক নিয়মকানুনে বেঁধে ফেলা হত সৌদিতে আসা বিদেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের। খর্ব করা হত যাবতীয় স্বাধীনতা। যেমন, ওই শ্রমিকেরা কোথায় থাকবেন, কোথায় কাজ করবেন, সৌদি ছেড়ে বেরোতে পারবেন কি না, এ ধরনের কোনও স্বাধীনতাই তাঁদের থাকত না। ‘কাফালা’ রদে অন্তত ১ কোটি ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হবেন বলে অনুমান। এঁদের বেশির ভাগই ভারত-সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা।
‘কাফালা’— এই আরবি শব্দের অর্থ স্পনসরশিপ বা পৃষ্ঠপোষকতা। এই আইনি ব্যবস্থাটি এত দিন চাকরিতে নিয়োগকর্তা ও বিদেশি শ্রমিকদের অধিকারের ভেদাভেদ স্পষ্ট করে দিত। ১৯৫০-এর দশকে পশ্চিম এশিয়া যখন তেলের অর্থে ফুলেফেঁপে উঠছে, সে সময়ে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে আইনি ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি বিদেশি শ্রমিককে কোনও এক স্থানীয় পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে বাঁধা পড়ে থাকতে হত। এই স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তিটিকে বলা হত কাফিল। এই ব্যক্তিটিই ওই শ্রমিকের বাসস্থান, কর্মস্থল নিয়ন্ত্রণ করতেন। কালে কালে এই কাফালা ব্যবস্থাটি একটি অপরাধ চক্র হয়ে উঠেছিল। গরিব ভিন্দেশি শ্রমিকদের উপরে যথেচ্ছ অত্যাচার করা হত, শোষণ করা হত তাঁদের। অনেক সময়ই শোনা যেত, শ্রমিকের পাসপোর্ট আটকে রেখে দিয়েছেন নিয়োগকারী ব্যক্তি, বেতনও দিচ্ছেন না। ওই শ্রমিক চাইলেও চাকরি বদল করতে পারতেন না। পৃষ্ঠপোষকের অনুমতি ছাড়া প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারতেন না। আবার পাসপোর্ট না থাকায় নিজের দেশে ফিরেও যেতে পারতেন না।
বিষয়টি মানবাধিকার সংগঠনগুলির নজরে আসায় তারা সরব হয়। তারা জানায়, একপ্রকার ‘দাসবৃত্তি’ করানো হচ্ছে চাকরি দেওয়ার নামে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে একের পর এক আইনি সংস্কার করেছেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। কাফালা ব্যবস্থাটি রদ হওয়ায় এ বারে ভিন্দেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে চাকরি বদল করার স্বাধীনতা থাকবে। পৃষ্ঠপোষকের অনুমতি ছাড়াই, বিনা এক্সিট ভিসায় তাঁরা সৌদি আরব ছেড়েযেতে পারবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)