Advertisement
E-Paper

ভোট মানেই আশার আলো

চাইব নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবে ভোট হোক ভারতে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন সকলেই। আমরা নেপালিরা কিন্তু ভোট দেওয়ার ব্যাপারে খুব প্যাশনেট। গ্রীষ্ম হোক বা শীত, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করলেই আমরা প্রবল উৎসাহে দাঁড়িয়ে পড়ি ভোটের লাইনে।

গুণরাজ লুইটেল

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৭

আর এক দিন পরেই ভোটে নামছে পড়শি দেশ। কী হয়, সে দিকে নজর রাখছি আমরাও। ভারতে ভোট মানেই যে বিশাল একটা ব্যাপার, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। খবরের কাগজে চোখ রাখলে এর কিছুটা আন্দাজও পাওয়া যাচ্ছে। রোজই কিছু-না কিছু ঘটছে। নিশ্চিত এর ভাল-মন্দ প্রভাব ভারতের লোকসভা ভোটেও পড়বে।

চাইব নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবে ভোট হোক ভারতে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন সকলেই। আমরা নেপালিরা কিন্তু ভোট দেওয়ার ব্যাপারে খুব প্যাশনেট। গ্রীষ্ম হোক বা শীত, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করলেই আমরা প্রবল উৎসাহে দাঁড়িয়ে পড়ি ভোটের লাইনে। নেপালে শেষ বার ভোট হয়েছিল ২০১৭-য়। দেশের ফেডারেল পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ২৭৫টি আসনে। দু’টো পর্বে ভোট হয়েছিল সে বার— ২৬ নভেম্বর এবং ৭ ডিসেম্বরে। ভারতে তো এ বার লোকসভা ভোট হচ্ছে সাতটি পর্বে।

তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন আমাদের শুরু হয়েছে হালে। রাজার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদীদের দীর্ঘ কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ২০০৬-এ নেপালকে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সরকারি ভাবে

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঘোষণা করা হয়। ২৪৮ বছরের রাজতন্ত্রের শেষ দেখাটা নিশ্চিত ভাবেই একটা অভিজ্ঞতা।

সরকারি ভাবে স্বীকৃতি তো মিলল, কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিকাঠোমা কার্যকরী করতে গিয়ে কেটে গেল আরও দশটা বছর। প্রায় দু’দশক পরে ২০১৭-য় আঞ্চলিক স্তরেও ভোটের আয়োজন হল। ১৭ মে, ২৮ জুন এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ভোট হল ছ’টি মহানগর, ১১টি উপ-মহানগর, ২৭৬টি শহর এবং ৪৬০টি গ্রামীণ পুরসভায়। দেখা গেল, সেখানেও উৎসাহে কমতি

নেই আমজনতার।

এই মুহূর্তে নেপালে ত্রিস্তরীয় সরকার— কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক এবং আঞ্চলিক। সংবিধান মোতাবেক প্রত্যেক সরকারেরই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের দেশে সংবিধান রচনার ইতিহাসও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯০-এ গণ-আন্দোলনের জেরেই কয়েক দশকের স্বৈরতন্ত্র ভেঙে যায়। প্রশাসনে বহুদলীয় কাঠামো ঢুকে পড়ে। এবং তখনই রাজা বীরেন্দ্র শাহ এবং রাজনৈতিক দলগুলি গণতান্ত্রিক সংবিধানে সর্বসম্মতি দেয়। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত হয় নেপালে।

এর পর-পরই ভোটযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় দেশে। ধারাবাহিক ভাবে ভোট হতে থাকে। আরও মানুষও দিব্যি অভ্যস্ত হয়ে যান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায়।

কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এতে ফের তাল কাটল। ‘জনযুদ্ধ’-এ নেমে পড়ল মাওবাদীরা। এবং এর জেরে আমার দেশ যে কত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসেব নেই। বিপন্নপ্রায় হয়ে দাঁড়ায় গণতন্ত্রও। ভোটের কথা আর না-ই বা বললাম! বেশির ভাগ ভোটই বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য। কোথাও যদিও বা ভোটের আয়োজন করা হল, তো সেটাও ভেস্তে দিল মাওবাদীরা।

এক দিকে সশস্ত্র সংগ্রাম আর অন্য দিকে, রাজা এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ক্ষমতাদখলের লড়াই। ক্রমশই যেন তলিয়ে যাওয়ার

মতো অবস্থা হয়েছিল গোটা দেশের। তার পর ২০০৫-এ জোর করে ক্ষমতাদখল করলেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ। জেল হয়ে গেল নির্বাচিত সব মন্ত্রীদের। সেনা দিয়ে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এমনকি সংবাদমাধ্যমেরও মুখ বন্ধ করে দেওয়া হল।

তবে বছরখানেকের মধ্যেই যে পরিস্থিতি পাল্টাল, সেটাই আসল। যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ঘুরে দাঁড়াল নেপাল। এবং সেটা মানুষ চেয়েছিল বলেই। আমার বিশ্বাস, পর্যায়ক্রমিক এবং ধারাবাহিক ভোট ছাড়া কোনও গণতন্ত্রই টিকতে

পারে না। ইতিহাস বলছে, নেপালের রাজতন্ত্র বরাবর সেই অপচেষ্টাই করে এসেছে। ১৯৫৯-এ দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বিপি কৈরালা। কিন্তু এক বছরের মাথায় তাঁকে ছেঁটে ফেলে দেশে তিরিশ বছরে জন্য পঞ্চায়েত শাসন চাপিয়ে দেন তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র।

এখন অবশ্য সব ঠিকই আছে। দীর্ঘ একটা সময় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না-পেরে মানুষের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অভাবে এর সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে দুর্নীতি বাড়ছিল দেশে। ভোট ফের আশার আলো দেখিয়েছে। এ বার শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা।

লেখক সাংবাদিক

অনুলিখন: স্নেহাংশু অধিকারী

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Nepal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy