অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে দুই বন্দুকবাজের এলোপাথাড়ি গুলিতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এত দিন শোনা যাচ্ছিল, সম্পর্কে পিতা-পুত্র ওই দুই আততায়ী সম্ভবত পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন। এ বার সেই ঘটনার তদন্তে উঠে এল নয়া তথ্য। জানা গেল, গত মাসেই ফিলিপিন্স ভ্রমণে গিয়েছিলেন দুই বন্দুকবাজ। তা-ও আবার ভারতীয় পাসপোর্টে! এর পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা, তবে কি ভারতীয় নাগরিক ছিলেন নিহত অভিযুক্ত সাজিদ আক্রম?
ফিলিপিন্সের অভিবাসন দফতর জানিয়েছে, সিডনির বন্ডি সৈকতে ১৫ খুনে অভিযুক্ত সাজিদ ও তাঁর ছেলে নবিদ আক্রম গত মাসে ফিলিপিন্স সফরে গিয়েছিলেন। অভিবাসন দফতরের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে আসা ওই দুই ব্যক্তি গত ১ নভেম্বর ভারতীয় পাসপোর্টে ফিলিপিন্সে ঢুকেছিলেন। গোটা নভেম্বর মাসটা ফিলিপিন্সেই কাটিয়েছিলেন বাবা-ছেলে। অবশেষে ২৮ নভেম্বর দেশ ছাড়়েন তাঁরা। দাভাও থেকে ম্যানিলাগামী বিমানে চেপে রওনা দেন অন্তিম গন্তব্য সিডনির উদ্দেশে।
আরও পড়ুন:
ওই মুখপাত্রের কথায়, ‘‘২৮ তারিখ দু’জনেই দাভাও থেকে ম্যানিলাগামী একটি উড়ানে চড়ে বসেন। তার পর আর একটি বিমানে চেপে ম্যানিলা থেকে সিডনির উদ্দেশে রওনা দেন।’’ গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছে ফিলিপিন্সের অভিবাসন দফতর ও পুলিশ। তদন্তকারী সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ়-ও জানিয়েছে, বন্ডি সৈকতে গুলিবর্ষণের আগের মাসেই ফিলিপিন্সে ভ্রমণে যান সাজিদ ও নবিদ। নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার মার ল্যানিয়ন বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত যে অভিযুক্তেরা ফিলিপিন্সে গিয়েছিলেন। তবে তাঁরা কেন সেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে থাকাকালীন আর কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন তাঁরা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’ মনে করা হচ্ছে, সেখানে ‘সামরিক প্রশিক্ষণ’ নিতে গিয়েছিলেন সাজিদ ও নবিদ। কী ভাবে তাঁরা ভারতীয় পাসপোর্ট পেলেন, ওই নথিতে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, সে সব নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এবিসি নিউজ় জানিয়েছে, ঘাতক পিতা-পুত্রের গাড়ি থেকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এর দু’টি পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছ থেকে দু’টি বিস্ফোরকও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। সেগুলিকে পরে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, সাজিদের নামে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। সম্ভবত সবক’টি আগ্নেয়াস্ত্রই ব্যবহার করা হয় রবিবারের হামলায়।
আরও পড়ুন:
২০১৯ সালে নবিদ প্রথম বার অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসেন। কিন্তু সে সময়ে তাঁকে সন্দেহজনক বলে মনে হয়নি। নবিদের বাবা সাজিদ অবশ্য ১৯৯৮ সালে ছাত্র ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। রবিবার দুপুরে বন্ডি সৈকতে সিডনির ইহুদি গোষ্ঠীর হানুকা উৎসব চলছিল। আগ্নেয়াস্ত্র সমেত সেখানে পৌঁছে যান পিতা-পুত্র। তার পর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে দেন। মাত্র ১০ মিনিটের সেই হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাজিদের। নবিদও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া, আরও ২৫ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছ’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনার ল্যানিয়ন জানিয়েছেন, বন্ডি সৈকত এবং আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবারও কড়া প্রহরা জারি ছিল। ফরেন্সিক এবং ব্যালিস্টিক তদন্ত চলছে। তবে বুধবার বিকেলের মধ্যে এলাকাটি ফের জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।