দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ সুবিদিত। সেই প্রধানমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলেই ইস্তফা দিলেন ব্রিটেনের পরিবেশমন্ত্রী লর্ড জ়্যাক গোল্ডস্মিথ। পদত্যাগ-পত্রে সরাসরি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের দিকে আঙুল তুলেছেন গোল্ডস্মিথ। জানিয়েছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী দিনের পর দিন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করে আসছেন। গোল্ডস্মিথ আরও জানিয়েছেন, সুনকের জন্যই গোটা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে ব্রিটেন পিছিয়ে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন, তাই তাঁর এই ইস্তফা।
গোল্ডস্মিথের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পরিবেশ-খাতে প্রায় ১ হাজার ১০০.৬ কোটি পাউন্ড অর্থ বরাদ্দ করার কথা ছিল ব্রিটিশ সরকারের। কিন্তু সুনক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই সেই ঘোষণা থেকে সরকার সরে আসে। পশুকল্যাণ বিল নিয়েও সুনক সরকার গড়িমসি করেছে বলে পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেছেন গোল্ডস্মিথ। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যা এটা নয় যে, এ দেশের সরকার পরিবেশ-বিরোধী। আসলে আপনি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, কোনও ভাবেই পরিবেশের জন্য কোনও রকমের প্রতিশ্রুতি দিতে চান না।’’
সুনক গোল্ডস্মিথের অভিযোগ উড়িয়ে বলেছিলেন ব্রিটিশ সরকার এখনও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাবতীয় ক্ষেত্রে বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকাই পালন করে আসছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য গোল্ডস্মিথের পদত্যাগের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলেই মনে করছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন-ঘনিষ্ঠ গোল্ডস্মিথের সঙ্গে সুনকের মতবিরোধ সম্প্রতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। জনসনের বিরুদ্ধে হওয়া পার্টিগেট মামলা গোল্ডস্মিথ প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তের দায়িত্বে থাকা প্রিভিলেজ কমিটির সদস্যেরা গোল্ডস্মিথের নাম সরাসরি নিয়েই জানিয়েছিলেন, তিনি বারবার ওই মামলায় হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছেন। এর পরেই প্রিভিলেজ কমিটি ইচ্ছাকৃত ভাবে জনসনকে ফাঁসাতে চায় বলে মন্তব্য করেন গোল্ডস্মিথ। যার জেরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলে।
এই ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গেই সুনকের সঙ্গে প্রকাশ্যে তর্ক বাধে গোল্ডস্মিথের। তবে গোল্ডস্মিথের দাবি, ক্ষমা চাইতে তাঁর কখনও অসুবিধে ছিল না। প্রকাশ্যে কমিটি সম্পর্কে তাঁর এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি বলেও জানিয়েছিলেন গোল্ডস্মিথ। গোটা বিষয়টি নিয়ে সুনক নীরবই থেকেছেন। তবে পরিবেশমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে সুনক সরকারকে আরও এক বার বিঁধেছেন বিরোধী লেবার পার্টি এবং লিবারাল ডেমোক্র্যাট দলের এমপি-রা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)