Advertisement
০৪ মে ২০২৪
India-Maldives Relationship

ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলল মলদ্বীপ, বেঁধে দিল সময়ও, নেপথ্যে কি রয়েছে সেই চিনেরই হাত?

চিন সফর শেষে দেশে ফেরার পরেই শনিবার মুইজ্জু বলেন, “হতে পারি আমরা ক্ষুদ্র। কিন্তু তাই বলে কাউকে ধমকানোর ছাড়পত্র দিয়ে দিইনি আমরা।” এর পরেই নতুন মাত্রা পায় ভারত-মলদ্বীপ বিতর্ক।

নরেন্দ্র মোদী এবং মহম্মদ মুইজ্জু (ডান দিকে)।

নরেন্দ্র মোদী এবং মহম্মদ মুইজ্জু (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২০
Share: Save:

চিন সফরের পরেই ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। শনিবার কোনও দেশের নাম না করেই হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছিলেন, কাউকে ধমকানোর ছাড়পত্র দেয়নি তার সরকার। তার পরের দিনই ভারতীয় সেনাকে দ্রুত মলদ্বীপ ছাড়তে বলল তাঁর সরকার। তবে এ বার শুধু কূটনৈতিক স্তরে আর্জি জানানোই নয়, রীতিমতো দু’মাসের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে মলদ্বীপ সরকার। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ভারতীয় সেনাকে মলদ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তরফে এই খবর পাওয়া গিয়েছে।

এর আগে কূটনৈতিক স্তরে সেনা সরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতকে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। এ বার সরাসরি ‘নির্দেশ’ দেওয়া হল। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লা নাজ়িম ইব্রাহিম সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, “ভারতীয় সেনারা মলদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত।”

মুইজ্জুর সেনা সরানো সংক্রান্ত নির্দেশের নেপথ্যে চিনের হাত দেখছেন কেউ কেউ। কারণ ভারত-মলদ্বীপ চলতি বিতর্কের শুরুতে খানিক সুর নরমের ইঙ্গিত দিয়েছিল মলদ্বীপ সরকার। ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীকে। তার পরেও অবশ্য দুই দেশের সম্পর্ক খুব একটা সহজ হয়নি। সমাজমাধ্যমে ভারতীয় নেটাগরিকদের ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রকে। আগে থেকে মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করেন একের পর এক ভারতীয়। এই প্রবণতা এখনও বন্ধ হয়নি।

মলদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এমনিতেই ‘চিনপন্থী’ বলে পরিচিত মুইজ্জু। গত সপ্তাহেই তিনি পাঁচ দিনের জন্য চিন সফরে যান। সফরের তৃতীয় দিনে গত বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গে রাজধানী বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে মলদ্বীপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন চিনা প্রেসিডেন্ট তথা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বৈঠকেই বেজিংকে তাঁদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলেন মুইজ্জু। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি সই হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে মুইজ্জু বলেন, ‘‘আমাদের দেশের মাটি থেকে সমস্ত বিদেশি সেনাকে আমরা ফেরত পাঠাব।’’ এ ক্ষেত্রে মুইজ্জু নাম না-করলেও স্পষ্ট ভাবেই ভারতকে নিশানা করেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনা। পরে কূটনৈতিক স্তরেও ভারতকে সেনা সরাবার বার্তা দেয় মলদ্বীপ। দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘরোয়া রাজনীতিতেও মুইজ্জুর দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপস (পিপিএম) এই বলে প্রচার চালায় যে, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতাকে খর্ব করতেই সেনা রেখে দিয়েছে ভারত।

যদিও বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণে তীব্র জাতীয়তাবাদী প্রচার চালাচ্ছেন মুইজ্জু। তাদের বক্তব্য, ভারতের মাত্র ৮৮ জন ভারতীয় সেনা কখনওই মলদ্বীপের নিরাপত্তার জন্য ‘বিপজ্জনক’ হতে পারতেন না। উল্টে দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণ পাঠাত ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টারগুলিই। ভারতের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের যুক্তি খাড়া করলেও মুইজ্জুর প্রশাসন কিন্তু সম্প্রতি সে দেশে চিনের একটি নজরদার জাহাজকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। সূত্রের খবর, কলম্বো বিমানবন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করতে না-পেরে মলদ্বীপের কোনও বন্দরে ভিড়তে চলেছে সেটি। এই আবহেই মলদ্বীপ সরকারের ‘ভারত-বিরোধী’ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে চিনের হাত দেখছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maldives Mohamed Muizzu Narendra Modi Indian Army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE