Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Gun Law

নতুন বছরের প্রথম মাসেই হিংসার ঘটনা ৫২টি, কড়া বন্দুক-আইন আনার পথে আমেরিকার বহু প্রদেশ

ক্যালিফর্নিয়ায় এই জানুয়ারিতে পর পর  দু’টো বন্দুকজনিত  গণহত্যা হওয়ার পরে একটা নতুন বিপজ্জনক প্রশ্ন সামনে এসেছে। ক্যালিফর্নিয়ায় অস্ত্র আইন সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন।

A photograph of a gun

গত বছর নভেম্বরে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের পরেই বিভিন্ন রাজ্যস্তরে বন্দুক আইন পরিবর্তনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। প্রতীকী চিত্র।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৩
Share: Save:

২০২৩ সালের প্রথম মাসটুকু কেটেছে। এরই মধ্যে আমেরিকায় বন্দুক-হিংসার ঘটনার সংখ্যা ৫২। ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ নামক একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের হামলায় জানুয়ারি মাসে নিহতের সংখ্যা ৯৮ (তার মধ্যে বন্দুকবাজও রয়েছে) এবং জখমের সংখ্যা ২০৫। এই পরিস্থিতিতে কড়া বন্দুক আইন আনতে তৎপর হয়েছে বেশ কিছু প্রদেশ। যে সব প্রদেশে প্রশাসনিক স্তরে বন্দুক-হিংসা রুখতে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, সেখানে তৃণমূল স্তরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং অসংখ্য মানুষ।

মেরিল্যান্ড প্রদেশে আনা হচ্ছে বেশ কিছু আইন। যেমন, আগ্নেয়াস্ত্র কেনার বয়স আঠারো থেকে বাড়িয়ে একুশ করা, অস্ত্র নিয়ে স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, ধর্মস্থান বা পার্কে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা, বন্দুক-হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের বন্দুক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ ইত্যাদি।

গত বছর নভেম্বরে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের পরেই বিভিন্ন রাজ্যস্তরে বন্দুক আইন পরিবর্তনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের মে মাসে মিশিগান রাজ্যের বাফেলো শহরে একটি মুদিখানার দোকানে বন্দুকের গুলিতে নিহত হন দশ জন সাধারণ মানুষ। তখনই মিশিগানের ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রদেশে কড়া বন্দুক আইন আনতে চান তিনি। হুইটমার তাঁর দ্বিতীয় টার্মের শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন, বন্দুক আইন নিয়ে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ— ইউনিভার্সাল ব্যাকগ্রউন্ড চেক, অর্থাৎ যিনি বন্দুক কিনছেন তাঁর অপরাধের কোনও রেকর্ড রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে তার পরেই বন্দুক বিক্রি করা। তা ছাড়া, আগ্নেয়াস্ত্রজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র আর গুলি যাতে আলাদা রাখা হয়, সেই লক্ষ্যেও নতুন আইন আনতে চান গভর্নর হুইটমার।

ওয়াশিংটন প্রদেশেও আসছে নতুন বন্দুক বিল। যে সব নিয়ম এই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— বন্দুক কেনার জন্য আবেদন করার অন্তত দশ দিন সময় নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং বাধ্যতামূলক সেফটি ট্রেনিং, অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি।

ভার্জিনিয়া, কানেটিকাট, কলোরাডো প্রদেশেও কড়া বন্দুক আইন চালু করতে আনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিল। এ ছাড়া, বিভিন্ন প্রদেশে তৃণমূল স্তরে কাজ করছে বেশ কিছু সংস্থা— ‘গ্র্যান্ডমাদার্স এগেনস্ট গান ভায়োলেন্স’, ‘মাদারস এগেনস্ট গান ভায়োলেন্স, ‘এভরিটাউন ফর গান সেফটি’। প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় স্তরে তারা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় স্তরে এখনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিল রূপায়িত হয়নি। এর প্রধান কারণ, সেনেট এই বিল আনার বিষয়ে সম্পূর্ণ বিভক্ত। এবং এই বিভাজন শুধু রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাট দলের মতপার্থক্যে আবদ্ধ নয়। দু’টি দলেই দুই মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন। এবং গোটা দেশের ছবিটাই এ রকম। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার রক্ষার জন্য বন্দুক রাখার পক্ষে সওয়াল করে এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।

ক্যালিফর্নিয়ায় এই জানুয়ারিতে পর পর দু’টো বন্দুকজনিত গণহত্যা হওয়ার পরে একটা নতুন বিপজ্জনক প্রশ্ন সামনে এসেছে। ক্যালিফর্নিয়ায় অস্ত্র আইন সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এখানে নিষিদ্ধ এবং বন্দুক অধিকারীদের আচরণ, আইনভঙ্গের ঘটনা বা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোনও সমস্যা ধরা পড়লে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ জারি করা হয়। তবু এ রকম ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, অন্য প্রদেশ থেকে হয়তো অস্ত্র কিনে ক্যালিফর্নিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় স্তরে আইনের পরিবর্তন না হলে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।

গত তিন বছরে প্রতি বছর বন্দুক-হিংসায় নিহতের সংখ্যা ছিল গড়ে ছ’শোরও বেশি। অর্থাৎ, প্রতিদিন বন্দুকের গুলিতে দু’জন নিহত হচ্ছেন— নিজের বাড়িতে, রাস্তায়, কোনও জমায়েতে, এমনকি স্কুলেও। কোভিড অতিমারির প্রথম বছর, ২০২০তে এই সংখ্যা প্রায় তিরিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, শেষ দশ বছরে তা বেড়েছে প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ। বছরের শুরুর পরিসংখ্যান কি আরও ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE