ক্রমাগত একই প্রশ্ন দুবাইয়ের গোয়েন্দাদের। আর ক্রমাগত উত্তর ‘না’ বলে যাওয়া। জেলের মধ্যে অন্য কোথাও সরাতে হলে চোখে পট্টি, হাতে হাতকড়া। বাথরুম গেলে পায়ে বেড়ি। হতাশার রোগী হয়ে ওষুধের পর ওষুধ...।
তার পর এক সময়ে বলে ফেলা, ‘‘হ্যাঁ আমি ব্রিটিশ গুপ্তচর। এমআই-৬-এর ক্যাপ্টেন।’’ কিন্তু ‘কাল্পনিক’ জেমস বন্ড ব্রিটেনের যে আন্তর্জাতিক গুপ্তচর সংস্থাকে বিখ্যাত করে গিয়েছেন, সেই বাহিনীতে তো ক্যাপ্টেন পদই নেই!
শুনে ম্যাথু হেজেস বলছেন, ‘‘ওই প্রচণ্ড মানসিক অত্যাচারের মুখে একটা সময়ে আমার কিছু করার ছিল না। ওরাই ‘ক্যাপ্টেন’ পদটার কথা বলছিল। তাই আমিও বললাম।’’
গত ৫ মে দুবাই বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন ম্যাথু। চরবৃত্তির দায়ে। হেজেসের দাবি, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের পিএইচডি-র কাজেই তাঁর দুবাইয়ে যাওয়া। ২০১১ সালের ‘আরব বসন্ত’-পরবর্তী সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। মে-তে গ্রেফতারের পরে ২১ নভেম্বর তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আমিরশাহি সরকার। কিন্তু ২৬ নভেম্বরই মুক্তি পান নাটকীয় ভাবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহয়ান-কে চিঠি লিখেছিলেন ম্যাথুর স্ত্রী ড্যানিয়েলা তেজাডা। ব্রিটেনের বন্ধু-রাষ্ট্র বলে পরিচিত দেশটির প্রেসিডেন্ট সেই আর্জি মঞ্জুরকরেন। ম্যাথু দেশে ফিরেছেন। প্রথম সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন রেডিওতে। সেখানেই তুলে ধরেছেন তাঁর জেল-জীবনের ইতিবৃত্ত।
জেরা-করা গোয়েন্দারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘ডাবল এজেন্ট’ হয়ে কাজ করার। ‘‘বলা হয়েছিল, ব্রিটিশ বিদেশ মন্ত্রকের ফাইল চুরি করে আনতে। আমি বললাম, পারব না। আমি তো বিদেশ মন্ত্রকের কর্মী নই। যে দিন সাজা ঘোষণা হল, মনে হল যেন বোমা ফাটল। ড্যানিয়েলা আদালতে ছিল। ওকে বিদায় জানাতেও পারিনি,’’ বলছিলেন ম্যাথু।
এখন কী করবেন? ম্যাথু জানাচ্ছেন, তাঁর প্রথম কাজ এখন মাথা ঠান্ডা করা। তার পর দেখা, কলঙ্কের দাগটা কী ভাবে মোছা যায়। কারণ, আমিরশাহিতে তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রেকর্ড রয়ে গেলে নানা দেশে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে গতিবিধি। আমিরশাহির গোয়েন্দাদের যদিও এখনও দাবি, ‘‘ম্যাথু ১০০ শতাংশ গুপ্তচর।’’