মিস জাপানের মঞ্চে প্রিয়ঙ্কা।
জাপানের সর্বোত্তম সুন্দরীর শিরোপার অর্ধেকটা আসলে বাংলার পাওনা!
কারণ, শুধু ভারত বা কলকাতার সঙ্গেই নয়, মিস জাপানের গভীর যোগ রয়েছে এ বঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে। তিনি বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের প্রপৌত্রী! প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ আসলে সম্পর্কে প্রিয়ঙ্কার বাবা অরুণ ঘোষের কাকা।
প্রিয়ঙ্কা ইয়োশিকাওয়ার। গত সোমবারই মিস জাপান হয়েছেন বছর বাইশের এই তরুণী। মিস জাপানের মঞ্চ থেকেই জানা যায় প্রিয়ঙ্কার শিকড়ের অর্ধেকটা আসলে কলকাতায় পোঁতা। তিনি যে আধা ভারতীয় এবং প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের বংশধর সে কথা বিচারকদের প্রিয়ঙ্কাই জানান। প্রায় ৩৬ বছর আগে তাঁর বাবা অরুণ ঘোষ ছাত্রাবস্থায় জাপানে চলে আসেন। বিয়ে করেন সে দেশের মেয়েকে। টোকিওতেই জন্ম হয় তাঁদের সন্তান প্রিয়ঙ্কার। তবে মা জাপানি হলেও বাংলার সঙ্গে যোগ আছে তাঁর। তিনি নাওকো জাপানে একটি স্কুলে বাংলার শিক্ষিকা।
প্রিয়ঙ্কার বাবারা সাত ভাই-বোন। কাকা অমল ঘোষ ছাড়া বাকিরা ভারতেই বাস করেন। কাকা অমলবাবু থাকেন টোকিওতে। সে কারণেই এ দেশের প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রথম থেকে। শিকড়কে ভাল করে চেনার জন্য বাবার সঙ্গে বহু বার ভারতেও এসেছেন প্রিয়ঙ্কা। ২০০৩ থেকে ২০০৪— ছেলেবেলার এই একটা বছর কাটিয়েছেন কলকাতাতেই।
কলকাতায় বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সাফল্যের কথা জানতে পারেন আত্মীয়েরা। প্রিয়ঙ্কার এই সাফল্যে তাই কলকাতা থেকেও শুভেচ্ছা উপচে পড়েছে তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে। এই শহরে থাকা প্রিয়ঙ্কার আত্মীয়রা তাঁকে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ভোটও দিয়েছেন। সম্পর্কে প্রিয়ঙ্কার ভাইঝি ক্রান্তিশিখা ধর বলেন, ‘‘ফেসবুক থেকেই এই প্রতিযোগিতায় ওর অংশগ্রহণ এবং সাফল্যের কথা জানতে পারি।’’ সোদপুরের বাসিন্দা রাইসা দে বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের সকলেই ওকে ভোট দিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: জাপানের প্রতিনিধি হয়েই বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে প্রিয়াঙ্কা
তবে ‘হাফু’ অর্থাৎ এই ‘অর্ধেক’ ভারতীয় পরিচয়ের জন্য বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। মিস জাপান হয়ে সম্প্রতি বিশ্বসুন্দরীদের লড়াইয়ের মঞ্চে ডাক পাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ঘিরে যে সমালোচনার ঝড় বইছে তা নিয়ে বেশ হতাশ প্রিয়ঙ্কার পরিবার। জাপানে অনেকেই বলছেন, পুরোপুরি জাপানি কোনও নাগরিকেরই বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করা উচিত ছিল। কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ প্রিয়ঙ্কা। বরং এ দেশে জাতিগত এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই লড়তে চান প্রিয়াঙ্কা। তাঁর অনুপ্রেরণা আরিয়ানা মিয়ামোতো। ২০১৫ সালে এই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলার বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়েও আপত্তি উঠেছিল জাপানে। নিজেকে জাপানি বললেও প্রিয়ঙ্কা তাঁর অর্ধেক শিক়়ড়ের কথা ভুলে যাননি। জাপানের জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি ভারতের আশ্রয়হীন শিশুদের পাশেও দাঁড়াতে চান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ওদের জন্য একটা বাড়ি বানাতে চাই। বাবা সে ব্যাপারে নানা বৈঠকও করছেন।’’ মিস জাপান-এর খেতাব পাওয়ার আগে বিচারকদেরও জানিয়েছেন এ কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy