Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
International News

হিরোশিমায় মোআব পড়লেও বিশ্ব আজ অনেকটা সুরক্ষিত থাকত

মোআব বা এমওএবি। পুরো ডাকনাম ‘মাদার অব অল বম্বস’। ভাল নাম ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট’। আমেরিকার এই মারণাস্ত্র এখন বিশ্ব জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। ১০ হাজার ৩০০ কেজি ওজন। আফগানিস্তানে আইএস বাঙ্কারের সারি গুঁড়িয়ে দিয়েছে দু’দিন আগে। শ-খানেক জঙ্গি খতম।

বিভৎস সেই দিন। হিরোশিমা, ৬ অগস্ট ১৯৪৫।

বিভৎস সেই দিন। হিরোশিমা, ৬ অগস্ট ১৯৪৫।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ১৭:৫৪
Share: Save:

মোআব বা এমওএবি। পুরো ডাকনাম ‘মাদার অব অল বম্বস’। ভাল নাম ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট’। আমেরিকার এই মারণাস্ত্র এখন বিশ্ব জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। ১০ হাজার ৩০০ কেজি ওজন। আফগানিস্তানে আইএস বাঙ্কারের সারি গুঁড়িয়ে দিয়েছে দু’দিন আগে। শ-খানেক জঙ্গি খতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার হাতে এর থেকেও বড় আর শক্তিশালী অপারমাণবিক (নন নিউক্লিয়ার) বোমা রাখা আছে। হ্যাঁ, ‘অপারমাণবিক বোমা’ শব্দটা এর আগে বোধহয় এত বার এক সঙ্গে উচ্চারিত বা লিখিত হয়নি পৃথিবী জুড়ে। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি দেখার পর নতুন করে আবার সেই হিসেবটা উস্কে উঠল যেন। যুদ্ধে ব্যবহৃত পৃথিবীর আদিমতম পরমাণু বোমা যা হিরোশিমায় ফেলেছিল আমেরিকা, বীভত্সতায় বা ভয়ঙ্করতায় তার ধারেকাছে নয় আমেরিকারই আধুনিকতম অ-পারমাণবিক বোমা।

সেই নিষ্ঠুরতা আজও ভুলতে পারেনি বিশ্ববাসী

১৯৪৫ সালের ৬ অগস্ট জাপানের হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণু বোমা ফেলেছিল মার্কিন সেনা। তিন দিন পর নাগাসাকিতে ফেলেছিল ‘ফ্যাট ম্যান’। মুহূর্তে ‘নরকযন্ত্রণা’য় ছটফট করে উঠেছিল দুটো শহর। এখনও পর্যন্ত আশার কথা, তার পর পৃথিবীতে আর কোনও পরমাণু বোমা কোনও যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে যে বোমা দু’টি ফেলা হয়েছিল, সেই দু’টিকে বাদ রাখলে, বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের নানগড়হরে ফেলা মোআবের চেয়ে বড় বোমা ইতিহাসে আর কোথাও কখনও পড়েনি। কিন্তু এক দুই নম্বরের সঙ্গে তিন নম্বরের ফারাক কোথায়? শব্দের নিরিখে একটা ‘অ’-এর ফারাক। কিন্তু আদিমতম পরমাণু বোমা আর আধুনিকতম অ-পারমাণবিক বোমার মারণ ক্ষমতার ফারাকটা দেখলে সত্যিই চমকে উঠতে হয়।

হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আণবিক বোমা না ফেলে যদি মাদার অব অল বম্বস-এর মতো কোনও বোমা ফেলত আমেরিকা, তা হলে কী হত? ক্ষয়ক্ষতি কতটা হতে পারত?

নিউক ম্যাপ বলছে, হিরোশিমায় এই বোমা পড়লে ১০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হত, জখম হতেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। কিন্তু আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’-এর আঘাতে সেখানে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৯০ হাজার মানুষের। মতান্তরে সেই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ১ লক্ষ ৪৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদদের বড় অংশের দাবি। নাগাসাকির ক্ষেত্রে নিউক ম্যাপ বলছে, আণবিক বোমা ‘ফ্যাট ম্যান’ না ফেলে মোআব-এর মতো কোনও বোমা যদি জাপানের সে শহরে ফেলত আমেরিকা, তা হলে মৃত্যু হত প্রায় ৭ হাজার মানুষের। জখম হতে পারতেন ২০ হাজারের মতো। কিন্তু আমেরিকার ফেলা ‘ফ্যাট ম্যান’ নাগাসাকিতে অন্তত ৩৯ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

ভাবতে ভয় হয় এখানেই। আফগানিস্তানের মাটিতে মোআব হামলা এবং তা নিয়ে জোরদার আলোচনা-বিশ্লেষণ আবার মনে করিয়ে দিল, কোন বিপদের উপর বসে আছে পৃথিবী। পৃথিবীতে বোমার ইতিহাস প্রায় আটশো বছরের পুরনো। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১২২১ সালে চিনের জিন সাম্রাজ্যের সেনা প্রথম বিস্ফোরক বোমা ফেলেছিল সং সাম্রাজ্যভুক্ত কোনও নগরে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বোমা হামলা সেটা। ত্রয়োদশ শতকে চিনেই প্রথম কাস্ট আয়রনের টুকরো আর গান পাউডার দিয়ে বোমা তৈরি হয়েছিল। তার পর ইয়াংশি দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। শিল্প বিপ্লব আর উপনিবেশবাদের হাত ধরে মূলত ইউরোপ হয়ে উঠল পৃথিবীর ভাগ্যনিয়ন্তা। একই সঙ্গে বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্রস্থলও হয়ে উঠল ইউরোপ। আর উনবিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে পৃথিবীতে আস্তে আস্তে বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠল আমেরিকা। গত শতাব্দীর প্রথম দিকেই মানুষ ভাল মতো পৌঁছে গিয়েছিল অণু, পরমাণুর গভীরে। তখন কে জানত, বিজ্ঞানচর্চার সেই পারমাণবিক বিশ্লেষণ কয়েক দশকের মধ্যেই মানুষকে এনে ফেলবে এক ভয়াল বিপদের গভীরে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর দেশে দেশে যে বোমা মজুত আছে, তার বেশির ভাগের কাছেই হিরোশিমা-নাগাসাকির বোমা শিশু মাত্র। ওই সব বোমা মিলে কয়েকটা পৃথিবীকে নিমেষে ধ্বংস করে দিতে পারে।

তবু বোমা তৈরি থামেনি। পারমাণবিক, অপারমাণবিক সব ধরণের বোমাই বানানো চলছে পৃথিবীর দেশে দেশে। শক্তিশালী, আরও শক্তিশালী, আরও শক্তিশালী বোমা।

অন্য বিষয়গুলি:

MOAB Mother Of All Bombs Explosion Hiroshima Nagasaki Bombs Nuclear Weapons Nuclear Bombs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy