Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
International News

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে পৃথক বৈঠকে ভারত-চিন, জল্পনা এনএসজি নিয়ে

বেজিং-এর সঙ্গে নয়াদিল্লির সমীকরণ ইদানীং খুব সহজ-সরল পথে এগোচ্ছে না। সীমান্ত নিয়ে সমস্যা তো রয়েইছে। অরুণাচল নিয়েও বেড়েছে টানাপড়েন। ভারতের এনএসজি সদস্যপদের বিরোধিতা করছে চিন।

আসতানায় এসসিও শিখর সম্মেলনে যখন ভারত ও চিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা হাজির হচ্ছেন, তখন তাঁদের মধ্যে আলাদা বৈঠক হবেই। জল্পনা এমনই ছিল। মিলেও গেল। ছবি: পিটিআই।

আসতানায় এসসিও শিখর সম্মেলনে যখন ভারত ও চিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা হাজির হচ্ছেন, তখন তাঁদের মধ্যে আলাদা বৈঠক হবেই। জল্পনা এমনই ছিল। মিলেও গেল। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ১৫:৪৪
Share: Save:

টানটান স্নায়ুর লড়াইয়ের মাঝে হঠাৎ একটু সৌহার্দ্যের বার্তা। মুখোমুখি ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট। কাজাখস্তানের আসতানায় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসলেন নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। ভারতকে সাংহাই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য করে নিতে চিনের ইতিবাচক ভূমিকার জন্য শি চিনফিংকে ধন্যবাদ জানালেন নরেন্দ্র মোদী।

রাশিয়া, চিন, ভারত, পাকিস্তান, কাজখস্তান, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান— এই ৮ দেশ এখন সাংহাই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য। এ ছাড়াও ৪টি দেশ রয়েছে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে, ৬টি দেশ রয়েছে ডায়লগ পার্টনার হিসেবে। অতিথি হিসেবেও এই সাংহাই জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেশ কিছু দেশকে। ভারত আগে এই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্য ছিল না। সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পেয়েছে। ভারতকে এসসিও-র পূর্ণাঙ্গ সদস্য করে নেওয়ার পিছনে চিনের ভূমিকাও ইতিবাচকই ছিল। তাই শুক্রবার আস্তানায় জোটের শিখর সম্মেলনের ফাঁকে যখন চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকে বসলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুললেন না। ‘‘ভারতকে এসসিও সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার যে প্রচেষ্টা এবং সমর্থন ছিল, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’’ প্রেসিডেন্ট চিনফিংকে এ দিন এ কথাই বলেছেন মোদী।

আসতানায় ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতের এনএসজি সদস্যপদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। খবর বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের। ছবি: পিটিআই।

বেজিং-এর সঙ্গে নয়াদিল্লির সমীকরণ ইদানীং খুব সহজ-সরল পথে এগোচ্ছে না। সীমান্ত নিয়ে সমস্যা তো রয়েইছে। অরুণাচল নিয়েও বেড়েছে টানাপড়েন। ভারতের এনএসজি সদস্যপদের বিরোধিতা করছে চিন। জঙ্গি মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা আদায়ের চেষ্টাও বেজিং বার বার ভেস্তে দিচ্ছে। সেই আবহেই গত মাসে বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের শিখর সম্মেলন ডেকেছিল চিন। বহু আলোচিত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নীতি রূপায়ণের লক্ষ্যেই এই সম্মেলনের আয়োজন। বহু চেষ্টা করেও চিন সেই সম্মেলনে ভারতকে হাজির করতে পারেনি। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) নীতির আওতায় যে চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হয়েছে, তা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ওই করিডর ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে নয়াদিল্লি একাধিক বার জানিয়েছে। এই সেই কারণেই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে সামিল হওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয় বলে নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বেজিং-এ আয়োজিত ওবিওআর শিখর সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাননি। তা নিয়ে বেজিং-এর উষ্মা ছিল যথেষ্টই। ভারত যদি বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ না দেয়, তা হলে দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রকল্প যে মোটেই সাফল্যের মুখ দেখবে না, তা চিন ভাল ভাবেই জানে। সেই কারণেই ওবিওআর সম্মেলনে ভারতকে সামিল করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু চিনের পরিকল্পনা সফল হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই নয়াদিল্লি এবং বেজিং-এর মধ্যে তিক্ততা আরও বেড়েছিল। শুক্রবার আসতানায় মোদী-চিনফিং বৈঠক সেই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করে তুলল বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের মত।

আরও পড়ুন: দুই সীমান্তে নয়, একসঙ্গে আড়াই ‘সীমান্তে’ লড়তে প্রস্তুত ভারত: সেনাপ্রধান

চিনফিং-এর সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পর মোদী টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘‘আমরা ভারত-চিন সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছি এবং কী ভাবে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’’ সাংহাই জোটের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য মোদী যেমন চিনফিংকে এ দিন ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তেমনই এনসজি সদস্যপদ নিয়েও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে কথা হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা এনপিটি-তে ভারত সই না করা পর্যন্ত ভারতকে এনএসজি-তে ঢুকতে দিতে চিন রাজি নয়। বার বার চিনের বাধায় ভেস্তে যাচ্ছে এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি। সেই বাধা কাটিয়ে কী ভাবে এগনো যায়, সে নিয়ে চিনফিং-এর সঙ্গে কথা বলেছেন মোদী। খবর সাউথ ব্লক সূত্রের।

চলতি বছরে এই প্রথম বার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখোমুখি হলেন নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। কিন্তু আগামী মাসেই জি-২০ শিখর সম্মেলন উপলক্ষে জার্মানির হামবুর্গে ফের এই দুই নেতার দেখা হওয়ার কথা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে চিনের সিয়ামেনে আয়োজিত হবে ব্রিকস শিখর সম্মেলন। সেখানেও দেখা হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং চিনের প্রেসিডেন্টের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE