Advertisement
E-Paper

বিমান দুর্ঘটনার পরেও বেঁচে গেলেন মা ও ছেলে

ভাঙা বিমানের দরজাটা ভেজানো। মনে হচ্ছে, এই বুঝি কেউ বিমান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু খেলনা। মনে হচ্ছিল, ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্তেও বিমানে খেলা করছিল কোনও শিশু। ভাঙা বিমান থেকে বেরিয়ে কয়েক পা দূরেই মিলল একটি শিশুর জন্মের শংসাপত্র।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ১৯:৩৫
কুইবদোয় পৌঁছনোর পর চিকিৎসার জন্য রওনা হচ্ছেন মারিয়া নেলি মুরিলো।

কুইবদোয় পৌঁছনোর পর চিকিৎসার জন্য রওনা হচ্ছেন মারিয়া নেলি মুরিলো।

ভাঙা বিমানের দরজাটা ভেজানো। মনে হচ্ছে, এই বুঝি কেউ বিমান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু খেলনা। মনে হচ্ছিল, ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্তেও বিমানে খেলা করছিল কোনও শিশু। ভাঙা বিমান থেকে বেরিয়ে কয়েক পা দূরেই মিলল একটি শিশুর জন্মের শংসাপত্র।

এই তিনটি সূত্র ধরেই ভেঙে পড়ার পাঁচ দিন পরে জঙ্গলের ভিতর থেকে উদ্ধার হল যুবতী মা মারিয়া আর তাঁর শিশুপুত্র।

ঠিক যেন টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’ ছবির চিত্রনাট্য। তবে এ ছবির মূল চরিত্র চাক নোল্যান্ডের মতো দীর্ঘ সময় কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে নয়, মারিয়াকে যুঝতে হয়েছে জঙ্গলের পাঁচটি দিন।

কলম্বিয়ার জঙ্গল থেকে গত কাল আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বছর আঠারোর মারিয়া নেলি মুরিলো আর তাঁর কয়েক মাসের ছেলেকে। মায়ের গায়ে পোড়া দাগ মিললেও ছেলে একেবারে অক্ষতই ছিল।

ভেঙে পড়া ছোট বিমানটির তল্লাশি অভিযানে নেমে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চালক এবং সহকারী-চালক ছাড়া আর কারও দেহ মেলেনি। তাই বাকিদের খোঁজে ছিলেন উদ্ধারকারীরা। কলম্বিয়া বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে। দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট সেসনা ৩০৩ বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের নুকুই শহরতলি থেকে নারকেল ও মাছ নিয়ে রওনা হয়েছিল কুইবদোর দিকে। মিনিট কুড়ি পরেই বিপত্তি। মাঝ আকাশে আচমকা উধাও হয়ে যায় বিমান। সঙ্গে সঙ্গে চালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
তবে সাড়া মেলেনি। পরে ওই বিমানটির খোঁজে অন্য বিমান পাঠানো হয়। তাতেও লাভ হয়নি। দু’দিন তল্লাশির পর গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটি সাদা বিন্দু নজরে আসে উদ্ধারকারীদের। সেখানে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, ছোট বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। আশপাশের এলাকা তোলপাড় করে খুঁজেও আরোহীদের দেহ মেলেনি।

তখন দুর্ঘটনাস্থল আরও ভাল করে খুঁটিয়ে দেখেন উদ্ধারকারীরা। পাওয়া যায় এক শিশুর জন্মের শংসাপত্র ও কিছু খেলনা। তখনও মেলেনি কোনও দেহ। তবে বিমানের যাত্রী-তালিকা খুঁজে পান উদ্ধারকারীরা। যাতে মারিয়া এবং তাঁর কয়েক মাসের ছেলে যুডিয়েরের নাম ছিল।। ওরা তবে কোথায়?

বিমানের খোলা দরজাটি দেখে ভরসা পান উদ্ধারকারীরা। এর পরে নিজেদের উপস্থিতি বোঝাতে বারবার মাইকে ঘোষণা করতে থাকেন। তাতেই মিলল সাড়া। জঙ্গলের আশ্রয় ছেড়ে ছেলে কোলে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে চলে আসেন মারিয়া। তাঁর দেহের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও খুদে ছিল বহাল তবিয়তে।


উদ্ধারকারীর কোলে নিশ্চিন্তে রয়েছে মারিয়ার শিশু-সন্তান।

কী করে বেঁচে গেলেন মারিয়ারা?

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী মা। তিনি জানান, বিমান ভেঙে পড়ার পরেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কোনওমতে তিনি কেবিনের দরজা খুলে পালাচ্ছিলেন। কিছু দূর গিয়েই মনে পড়ে ছেলের কথা। তাকে বাঁচাতে ফের ছুটে যান। ছেলেকে বার করে আনতে গিয়ে পুড়ে যায় তাঁর মুখ, হাত এবং পায়ের কিছু অংশ। এর পর ছেলেকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর একটি ছোট্ট নদীর তীরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মারিয়া। সেখানে নারকেলের জল খেয়েই পাঁচ দিন কাটিয়েছেন।

তাঁদের এখন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় তাজ্জব কলম্বিয়া বায়ুসেনার দুঁদে অফিসাররাও। তাঁরা জানান, বিমান দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে। এক অফিসারের মন্তব্য, মায়ের মনের জোরই ওই শিশুটিকে বাঁচার রসদ যুগিয়েছে। বাকিটা আশ্চর্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

ছবি: এএফপি।

mother and son survived plane accident mother son
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy