ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ভারতের প্রাক্তন নৌসেনা কুলভূষণ যাদবকে অপহরণে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে সাহায্য করেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে বালুচিস্তানের তুরবাতে মসজিদ থেকে প্রার্থনা করে বেরোনোর সময় অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা বাইকে করে এসে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে আইএসআইয়ের ‘বন্ধু’ তথা ধর্মীয় নেতা মুফতি শাহ মীরকে।
মীরের মৃত্যুর পরই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, তা হলে কি বন্ধুর হাতেই খুন হতে হল বন্ধুকে? মীরের হত্যার নেপথ্যে কি আইএসআই-এর হাত রয়েছে? এই সন্দেহও পাকিস্তানে ইতিমধ্যেই জোরালো হতে শুরু করেছে। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, আইএসআই-এর ‘ঘনিষ্ঠ’ হলেও সম্প্রতি মীরের সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থার দূরত্ব বাড়ছিল। একটা অন্তর্দ্বন্দ্বও চলছিল। ঘটনাচক্রে, মীর যে রাজনৈতিক দল জামাইত উলেমা-এ-ইসলাম (জেইউআই)-এর সদস্য, গত সপ্তাহেই ওই দলের আরও দুই সদস্য রহস্যজনক ভাবে খুন হন। সে ক্ষেত্রেও হামলাকারীরা বাইকে করেই এসেছিল এবং খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। যদিও পুলিশ এই তিনটি ঘটনাকে সুপরিকল্পিত হত্যা বলেই দাবি করেছে। কিন্তু এই হত্যার নেপথ্যে ‘আইএসআই তত্ত্ব’ই জোরালো হচ্ছে সে দেশে।
তবে এই প্রথম নয়, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, এর আগেও দু’বার প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল মীরের উপর। তবে দু’বারই বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের হামলায় শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ মনে করছে, আততায়ীরা মীরের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর পরই পরিকল্পনামাফিক খুন করেছে।
বালুচিস্তানে মীরের উত্থান একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবে। দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদন বলছে, মীর একজন ধর্মীয় নেতা হলেও আড়ালে নানা রকম বেআইনি কাজ পরিচালনা এবং তার নেতৃত্বও দিতেন বলে অভিযোগ ওঠে। ধর্মপ্রচারের আড়ালে অস্ত্র, মাদক এবং মানবপাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন মীর। পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিশিবিরে তাঁর নিত্য আনাগোনা লেগে থাকত। তা ছাড়া ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশেও মদত দিতেন বলেও বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি।
সূত্রের খবর, বালুচিস্তানে তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিদলে যোগদানের উৎসাহ দিতেন মীর। শুধু তা-ই নয়, আত্মঘাতী হামলাকারী নির্বাচন করা, অপহরণ, বালুচিস্তানের বহু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল মীরের বিরুদ্ধে। এমনকি বালুচিস্তানের বিদ্রোহীদের সম্পর্কে পাক সেনাকে খবরাখবর আদানপ্রদান করতেন এই ধর্মীয় নেতা। ২০১৬ সালে জইশ-অল-আদল গোষ্ঠীর প্রধান মুল্লা ওমর ইরানি ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে অপহরণ করেন ভারতের প্রাক্তন নৌসেনা কুলভূষণ যাদবকে। তার পর ইরানির কাছ থেকে আইএসআই-এর হাতে কুলভূষণকে তুলে দিতে মীর সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, ২০২০ সালে বালুচিস্তানের তুরবাতে জইশ-অল-আদল-এর প্রধান ইরানি এবং তাঁর দুই পুত্র খুন হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল সেই আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে। মীরের খুনের পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি ইরানির মতোই আইএসআই-এর শিকার হলেন মীর?