E-Paper

ভোট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, জানালেন ইউনূস

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। আজ রাজনৈতিকদলগুলির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকের পরে এ কথা জানান তাঁর প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ০৭:৪৪
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

আপাতত মুহাম্মদ ইউনূসের ইস্তফা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট করে দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সঙ্গে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। আজ রাজনৈতিকদলগুলির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকের পরে এ কথা জানান তাঁর প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

শফিকুল বলেন, ‘‘তিনি এক কথার মানুষ, তাঁর প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটবে না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা অনুরোধ করেছে, নির্বাচন শেষ না করে তিনি যেন পদত্যাগ না করেন।’’ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সেনা এবং বিএনপি দ্রুত নির্বাচন করার জন্য ইউনূসের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে।

ইউনূস ইস্তফা দিতে চান, এমন খবরের পর উপদেষ্টাদের বৈঠক দিয়ে আজ শুরু হয় দিন। সকালেই সরকারের তরফে জানানো হয়, ‘পরাজিত শক্তি’ ও ‘বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র’-এ যদি সরকার কাজ করতে না পারে তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কূটনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, ‘বিদেশি শক্তি’ হিসেবে কি ইউনূস ভারতের দিকে আঙুল তুলছেন?

তার পরে আজ সন্ধ্যায় দফায় দফায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও গণ অভ্যুত্থানে জড়িত ছাত্রদের দল এনসিপি-র সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। বিএনপি-র তরফে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুলস মইন খান, আমীর খসরু মহম্মদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর তরফে দলের আমির শফিকুর রহমান, এনসিপি-র তরফে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম,নেত্রী তাসনিম জারা, হাসনাত আবদুল্লা ও আরিফুল ইসলাম আদিব উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চেয়েছেন তাঁরা। নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন। মোশাররফ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি শুরু থেকে একটি জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করা ও সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।’’

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, নির্বাচন ও সংস্কারের ‘রোডম্যাপ’ প্রয়োজন। নির্বাচন কবে হবে, সেটি স্পষ্ট করা দরকার। ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে জনগণের বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়া একটি স্বস্তিজনক সময়ে নির্বাচন হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে অর্থবহ কিছু সংস্কারের প্রয়োজন এবং কিছু বিচার করা দরকার। এই সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়েই একটা নির্বাচন হবে, যেই নির্বাচনে একটা সমতল মাঠ থাকবে। নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। পেশিশক্তি এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকবে না।’’

জামায়াতে জানিয়েছে, তারা কোনও উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। সূত্রের খবর, উপদেষ্টাদের সরানো নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে মতবিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শফিকুল জানান, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চেয়েছে। জামায়াতে এবং এনসিপি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ভোট চায়।

এনসিপি-র দাবি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি ৩০ দিনের মধ্যে মেটানো বলে জানিয়েছিল সরকার। এখন সরকার জানিয়েছে, জুলাই মাসেই জুলাই সনদ আসতে পারে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পুনর্বাসনের কাজটা ধীরগতিতে চলছে। শহিদ ও আহতদের জন্য সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি যেন দ্রুত নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সব নির্বাচনকে অবৈধ করতে বলা হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।

আগামিকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম-সহ ৮টি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইউনূস। আজ অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের পরে হঠাৎই বৈঠক করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যেরা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে উনি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন।’’

এর পরে ইউনূসের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘‘বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপরে অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।’’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এ সব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া , উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এক্তিয়ার-বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি নিয়ে যে ভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং‌ জনমনে সংশয় ও সন্দেহ তৈরি করা হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।’’ অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে দেশে স্বৈরাচারের আবির্ভাব রুখতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, শত বাধার মধ্যেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার উপরে দেওয়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে ও বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্বপালন অসম্ভব করে তোলা হয়, তূবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে তুলে ধরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোহ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’’

আজ দুপুরে ইউনূসের সমর্থনে ঢাকায় ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামী-সহ কয়েকটি সংগঠন। সেখানে ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করার দাবি করা হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus Bangladesh Election Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy