এক দিকে ব্রহ্মাণ্ড এবং অন্য দিকে সূর্য! মহাবিশ্বের দুই অপার রহস্যময় দিকের চরিত্র সন্ধানে এ বার পাড়ি দিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বুধবারই
রকেটে চাপিয়ে ‘স্ফিয়ারএক্স’ এবং ‘পাঞ্চ’ নামে দু’টি মহাকাশযানকে পাঠিয়েছে তারা। এর মধ্যে ‘স্ফিয়ারএক্স’ (স্পেকট্রো-ফটোমিটার ফর দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ইউনিভার্স, ইপোক অব রিআয়োনাইজ়েশন অ্যান্ড আইসেস এক্সপ্লোলার) দু’বছর ধরে ব্রহ্মাণ্ডের নানা ছবি তুলে এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং বিবর্তন বোঝার জন্য জরুরি তথ্য বিজ্ঞানীদের সামনে এনে দেবে।
অন্য দিকে, পাঞ্চ (পোলারিমিটার টু ইউনিফাই করোনা অ্যান্ড হেলিয়োস্ফিয়ার) আদতে চারটি ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহের একটি সমষ্টি যা সৌরবায়ু এবং সৌরঝড়ের উৎপত্তি সংক্রান্ত গবেষণায় সাহায্য করবে।
নাসার তরফে জানানো হয়েছে, বিগ ব্যাং-এর পরবর্তী সময়ে কী ভাবে এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হল তা বোঝার জন্য এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সির চরিত্র বুঝতে হবে। আগামী দু’বছর ধরে ১০২ ধরনের ইনফ্রারেড বা অবলোহিত তরঙ্গের ব্যবহার করে বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের ছবি তুলবে সে। সৌরজগত যে নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তর্গত (মিল্কি ওয়ে) তার অন্তর্গত কয়েক কোটি নক্ষত্রের ছবিও তুলবে সে। বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে থাকা সূত্র ধরেই সৃষ্টির আদিপর্যায়কে বোঝার চেষ্টা করবেন বিজ্ঞানীরা।
সৃষ্টির আদিপর্ব যেমন বোঝার চেষ্টা হবে, তেমনই সৌরজগতে শক্তির উৎস সূর্যের চরিত্রও বুঝতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষত কী ভাবে সূর্য থেকে উৎপন্ন হওয়া আয়নিত কণা-সহ সৌরবায়ুর স্রোত ছড়িয়ে পড়ে এবং তার চরিত্র কী, তাই বোঝার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
এই পাঞ্চ মিশনের বিজ্ঞানী দলের সদস্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্পেস টেকনোলজি-র অধিকর্তা দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সূর্যের সব থেকে বাইরের স্তর (করোনা) থেকেই সৌরবায়ুর উৎপন্ন হয়। তাই পাঞ্চ-এর ক্যামেরাগুলি সৌর করোনার
গভীর ক্ষেত্রের নিরবিচ্ছিন্ন ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) ছবি তুলবে। তার ফলে সৌর বাতাসের ত্রিমাত্রিক অবস্থান বোঝা সম্ভব হবে।
সৌরবায়ু এবং সৌরঝড় বর্তমান সময়ে মানবসভ্যতার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই প্রবল আয়নিত কণার স্রোতের ধাক্কায় মহাকাশে থাকা বহু মহাকাশযান এবং কৃত্রিম উপগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বহু ক্ষেত্রে এই সৌরঝড়ের প্রভাবে সমস্যাও হয়। তাই সৌরঝড়ের
চরিত্র বোঝা গেলে এবং কখন এই সৌরঝড় হতে পারে, তা আঁচ করা গেলে সেই ঝড়ের পথ থেকে সাময়িক ভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশযানগুলিকে স্থানান্তর করাও সম্ভব হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)