Advertisement
E-Paper

সে দিনের আতঙ্কের মুখ মুম্বইয়ের নিধি

চোখের সামনে উড়ে যেতে দেখেছেন বিমানবন্দরের একটা অংশ। ভয়-আতঙ্কে কথা বেরোয়নি মুখ থেকে। আর কয়েক মিটার সামনে থাকলেই উড়ে যেতেন তিনিও! তবে গোটা ব্যাপারটা বুঝে ওঠার আগেই পকেট হাতড়ে মোবাইলটা বের করেছিলেন কেটভান কারদাভা। জর্জিয়ার একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক তিনি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২

চোখের সামনে উড়ে যেতে দেখেছেন বিমানবন্দরের একটা অংশ। ভয়-আতঙ্কে কথা বেরোয়নি মুখ থেকে। আর কয়েক মিটার সামনে থাকলেই উড়ে যেতেন তিনিও! তবে গোটা ব্যাপারটা বুঝে ওঠার আগেই পকেট হাতড়ে মোবাইলটা বের করেছিলেন কেটভান কারদাভা। জর্জিয়ার একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক তিনি। বিমানবন্দরের ছিন্নভিন্ন অবস্থাটা চটজলদি ক্যামেরাবন্দি করতে শুরু করেন। সামনে বসে থাকা দুই মহিলার সন্ত্রস্ত মুখ ক্যামেরাবন্দি হয়। তখনও বোঝেননি, তাঁর তোলা সেই ছবি ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সাড়া ফেলবে বিশ্বজুড়ে! প্রায় প্রতিটি খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাসেলস হানার মুখ হয়ে উঠবে সেই ছবি! আর সেই ছবিতেই বিমানবন্দরে নিখোঁজ মেয়েকে চিনতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়বে সুদূর মুম্বইয়ের শহরতলিতে!

ছবিতে স্পষ্ট আতঙ্ক। এক জনের হাত ভেসে যাচ্ছে রক্তে। আর অন্যজন পা ছড়িয়ে বসে আছেন। গায়ে তখনও হলুদ জ্যাকেটটা জড়িয়ে আছে কোনও রকমে। লন্ডভন্ড জামাকাপড়, ধোঁয়া আর ধূলোয় ধূসর হয়েছে ছবি। ইন্টারনেটে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে জানা গিয়েছে, হলুদ জ্যাকেট গায়ে ওই মহিলার নাম নিধি চাপেকর। বছর পঁয়তাল্লিশের নিধি একটি বিমান সংস্থায় ইনফ্লাইট ম্যানেজার। বাড়ি অন্ধেরিতে। ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার খবর পাওয়ার পর থেকেই নিধির খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেছেন তাঁর স্বামী রূপেশ। তাঁর কথায়, ‘‘সারা দিন আমরা ওর (নিধির) কোনও খবর পাইনি। বিমান সংস্থার তরফে আমাদের জানানো হয়, ও সুস্থ আছে। কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারিনি। এক বার ওর গলাটা শুনতে চেয়েছিলাম।’’ শুধু রূপেশই নন, নিধিকে নিয়ে দিনভর বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে তাঁর দুই সন্তানও। রূপেশ জানালেন, তাঁর ১১ বছরের মেয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রশ্ন করেছে মায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া গেল কি না। কিন্তু সত্যিই কোনও খোঁজ সারা দিন পাননি তাঁরা। রূপেশ জানালেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ওই বিমানসংস্থায় কাজ করছেন নিধি। মঙ্গলবার ব্রাসেলস থেকে মুম্বই উড়ে আসার কথা ছিল তাঁর। সেই ব্রাসেলস থেকে নিধির খবর শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দিল এই ছবিই। ভাইরাল হওয়া ছবি দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছে নিধির বাচ্চারাও। নিধির নামে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে টুইটারের নতুন হ্যাশট্যাগ #প্রেফরনিধি। চিকিৎসাধীন নিধি আর ওই সংস্থার আর এক আহত বিমানকর্মী অমিতকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা। জানানো হয়েছে, এখন সুস্থ রয়েছেন দু’জনই।

এত কিছু সত্ত্বেও অবশ্য বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। বিস্ফোরণের পর নিধির পোশাকের অনেকটাই ছিঁড়ে যাওয়ায় এই ছবি কেন ব্যবহার করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। যদিও এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি তাঁর পরিবার।

বিভিন্ন আন্দোলন থেকে জঙ্গি হামলা— বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার ‘মুখ’ হয়ে উঠেছে ছবি। যেমন, গোধরা হিংসায় উঠে আসা কুতুবুদ্দিন আনসারির হাতজোড় করে ক্ষমাভিক্ষার ছবি। ইস্তানবুলের তকসিম স্কোয়ারে লাল পোশাকের মহিলার গায়ে পুলিশের জলকামান। যেমন, তিয়েনানমেন স্কোয়ারে ট্যাঙ্কারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছাত্রের প্রতিবাদ। যেমন, বিস্ফোরণের আতঙ্কে ছুটে পালাতে চাওয়া ভিয়েতনামের খুদে। ছবিতেই ধরা পড়েছে ইতিহাস। এ বারও সেই ইতিহাসেই বন্দি হলেন নিধি!

Brussels suicide attack Mumbai
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy