Advertisement
E-Paper

সেই সবুজ ট্রেনে চেপেই এ বার চিনে হাজির কিম! উত্তর কোরীয় একনায়কদের এই বাহনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়-ভীতি-সন্দেহ

শুধু কিম একা নন, বংশ পরম্পরায় এই ধরনের ট্রেনের ব্যবহার হয়ে আসছে কিমের পরিবারে। তাঁর বাবা কিম জং ইল এবং ঠাকুরদা কিম ইল সাং-ও বিদেশে এ ভাবেই ট্রেনে সফর করতেন। সেই পরম্পরা এখন বহন করছেন উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রশাসক কিমও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১৯
North Korea leader Kim Jung Un reaches Beijing by special train, what are the features of it

সবুজরঙা এই বুলেটপ্রুফ ট্রেনেই বিদেশ সফর করেন উত্তর কোরিয়ার প্রশাসক কিম জং উন। ছবি: রয়টার্স।

সবুজরঙা ট্রেন। আগাগোড়া বুলেটপ্রুফ। যে ক’বার বিদেশ সফরে গিয়েছেন, এই ট্রেনই ছিল তাঁর যাতায়াতের মাধ্যম। চিন হোক বা রাশিয়া, এমনকি ভিয়েতনামেও এই ট্রেনে চড়েই সফর করেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রশাসক কিম জং উন। শুধু কিম একা নন, বংশ পরম্পরায় এই ধরনের ট্রেনের ব্যবহার হয়ে আসছে কিমের পরিবারে। তাঁর বাবা কিম জং ইল এবং ঠাকুরদা কিম ইল সাং-ও বিদেশে এ ভাবেই ট্রেনে সফর করতেন। সেই পরম্পরা এখন বহন করছেন উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রশাসক কিমও। সূত্রের খবর, কিম যে ট্রেনে চড়ে বেজিঙে গিয়েছেন, সেটির সঙ্গে তাঁর বাবা কিম জং ইলের জমানার ট্রেনের হুবহু মিল রয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত শাসক কিম জং ইল এমন ট্রেনেই দেশ-বিদেশ সফরে স্বচ্ছন্দ ছিলেন কারণ তিনি আকাশপথে ভয় পেতেন। কড়া নিরাপত্তায় মোড়া সবুজরঙা ওই ট্রেনে হলুদ রং দিয়ে লম্বা দাগ টানা থাকত। তাতে চড়ে ১৯৯৪-২০১১ সালের শাসনকালে কিমের বাবা সাত বার চিন সফরে যান। আর রাশিয়ায় যান তিন বার। গোটা ট্রেন ইস্পাতের পাতে মোড়া এবং বুলেটপ্রুফ। এত ভারী বলে গতিবেগ কখনওই ঘণ্টার ৬০ কিলোমিটারের বেশি হয় না। জরুরি অবস্থার কথা ভেবে সশস্ত্র অন্য যান এবং হেলিকপ্টারও থাকে ট্রেনে! উত্তর কোরিয়ার সরকারি সূত্রে দাবি, এমন ট্রেনেই ২০১১ সালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কিম জং ইল। কিম শাসকদের হেফাজতে এক রকম দেখতে এই ধরনের বেশ কয়েকটি ট্রেন আছে। পিয়ংইয়ংয়ের বিশেষ কারখানায় তৈরি হয় সেগুলো। রাষ্ট্রনেতার সফরের সময় তিনটি ট্রেন এক সঙ্গে যায়। সামনে থাকে যেটি, সেটি রেললাইন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে। মাঝেরটিতে থাকেন শাসক আর তাঁর আধিকারিকরা। একেবারের শেষে আর একটি ট্রেন, বাকি প্রতিনিধিদের জন্য। কিমের ঠাকুরদা কিম ইল সাং-ও এই ভাবেই সফর করতেন। চিন হোক বা রাশিয়া যেখানেই গিয়েছেন, এই সবুজ ট্রেনেই সফর করেছেন বর্তমান প্রশাসক কিমও। তা হলে কি তিনিও তাঁর বাবা, ঠাকুরদার মতো আকাশপথে যেতে ভয় পান? না কি ট্রেনেই বেশি নিরাপদ বোধ করেন করেন তিনি? কিমের ট্রেন সফর নিয়ে বহু বার এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর রহস্যেই মোড়া রয়েছে।

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চিন, রাশিয়া হোক বা ভিয়েতনাম, যখনই এই দেশগুলিতে গিয়েছেন, সবুজরঙা ওই ট্রেনে চড়েই গিয়েছেন কিম। ট্রেনগুলি যেমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া থাকে, তেমনই বিনোদনের ভরপুর ব্যবস্থা থাকে বলেও একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি। তবে কিমের কাছে এ রকম কতগুলি ট্রেন রয়েছে, সেই সংখ্যাটি স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিশেষজ্ঞ আন বায়ুং মিনের দাবি, একটি নয়, নিরাপত্তার কারণে একই রকম দেখতে বেশ কয়েকটি ট্রেনেই বিদেশ সফর করেন কিম। প্রতিটি ট্রেনে ১০-১৫টি বগি থাকে। তার মধ্যে কয়েকটি কিম নিজে ব্যবহার করেন, বাকি বগিগুলিতে তাঁর নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসক এবং প্রশাসনিক কর্তাদের জন্য রাখা থাকে। বিদেশ সফরের সময় গোটা ট্রেনটিই হয়ে ওঠে কিমের প্রশাসনিক দফতর। রাশিয়া সফরের সময়ও কিম ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ এই ট্রেনে চড়েই সেখানে গিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকে যোগ দিতেও এই সবুজরঙা ট্রেনেই গিয়েছিলেন কিম।

মঙ্গলবারই চিনে পৌঁছেছেন কিম। উত্তর কোরিয়ার প্রশাসকের বাহক সেই সবুজরঙা ট্রেন। উত্তর কোরিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে। ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ ট্রেনে চড়ে চিন সফরে গিয়েছেন তিনি। বেজিংয়ে সামরিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা রয়েছে তাঁর। উত্তর কোরিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে সে দেশের সরকারি সংবাদপত্র মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, সোমবার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে ট্রেন করে রওনা হন কিম। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী চো-সুন হুই এবং প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। স্থানীয় সময় বিকেলে বেজিঙে পৌঁছেছেন কিম। দু’দিন আগে চিনের তিয়ানজিনে ছিল সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ বৈঠক। সেই বৈঠক সোমবারই শেষ হয়েছে। এই বৈঠকে হাজির ছিলেন ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ত, তাজিকিস্তান-সহ কয়কেটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা।

চিনের সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও সে দেশেই রয়েছেন। ফলে এই সময়ে কিমের হাজির হওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০তম বর্ষপূর্তির স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন চিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেনার কুচকাওয়াজ হবে। সেই অনুষ্ঠানেই হাজির থাকার কথা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার প্রশাসকের। ঘটনাচক্রে, ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন রুশ প্রেসিডেন্টও। বৈঠক হতে পারে তিন রাষ্ট্রপ্রধানেরও। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে আমেরিকার শুল্কযুদ্ধের পরিস্থিতিতে এই তিন রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

২০১৯ সালের জুনের পর থেকে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি কিম-জিনপিঙের। ছ’বছর পর দুই রাষ্ট্রপ্রধান মুখোমুখি হচ্ছেন। ২০২৩ সালে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন কিম। চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। প্রসঙ্গত, যখনই আমেরিকা বা ইউরোপীয় দেশগুলি উত্তর কোরিয়াকে ‘রক্তচক্ষু’ দেখিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া এবং চিন।

Kim Jung Un North Korea Special Train Bullet-Proof
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy