Advertisement
E-Paper

একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার, তাও যুদ্ধের অযোগ্য, প্রবল চাপে চিন

দক্ষিণ চিন সাগরে দখলদারি কায়েম করার জন্য রোজ রণহুঙ্কার বেজিং-এর। আমেরিকা সহ যতগুলি দেশ এই চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব, তাদের সবাইকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে চিন। কিন্তু চিনা নৌসেনার প্রায় ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের দশা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ১৪:৩৪
একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার চিনা নৌসেনার হাতে। কিন্তু ১২৮ বছর আগে সোভিয়েত রাশিয়ায় তৈরি এই রণতরী  পুরোদস্তুর যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। —ফাইল চিত্র।

একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার চিনা নৌসেনার হাতে। কিন্তু ১২৮ বছর আগে সোভিয়েত রাশিয়ায় তৈরি এই রণতরী পুরোদস্তুর যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। —ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ চিন সাগরে দখলদারি কায়েম করার জন্য রোজ রণহুঙ্কার বেজিং-এর। আমেরিকা সহ যতগুলি দেশ এই চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব, তাদের সবাইকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে চিন। কিন্তু চিনা নৌসেনার প্রায় ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের দশা। একটা মাত্র এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভি’র হাতে। সেটিও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হয় সেটি। নৌসেনার এমন দশা সত্ত্বেও চিনের প্রবল হুঙ্কার আসলে অনেকটাই ফাঁকা আওয়াজ, বলছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

যুদ্ধে নৌসেনার ভূমিকা চিরকালই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের সম্রাট ফিলিপ তাঁর অপরাজেয় নৌসেনা ‘স্প্যানিশ আর্মাডা’র বলেই গোটা পৃথিবীর সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন। স্প্যানিশ আর্মাডাকে বিধ্বস্ত করে এক সময় আন্তর্জাতিক শিরোনামে চলে আসে ব্রিটিশ নৌসেনা। তার পর থেকে গোটা বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ নৌসেনার জয়যাত্রার সাক্ষী ইতিহাস।

আধুনিক যুদ্ধে নৌসেনার ভূমিকা আরও বেড়ে গিয়েছে। সামরিক দিক থেকে উন্নত সবক’টি দেশই নৌসেনার আধুনিকীকরণে বিপুল জোর দিয়েছে। ইরাক বা আফগানিস্তানের যুদ্ধে মার্কিন নৌসেনা খুব বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ইরাক এবং আফগানিস্তানের কাছাকাছি সমুদ্রে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার পাঠিয়েছিল আমেরিকা। সেখান থেকেই উড়ে গিয়ে হামলা চালানো শুরু করেছিল মার্কিন যুদ্ধবিমান। বর্তমানে আইএস বিরোধী যুদ্ধেও মার্কিন নৌসেনার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চলতি আন্তর্জাতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে প্রকারান্তরে নিজেদেরকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জার’ হিসেবে প্রমাণ করতে চায় যে চিন, তারা কিন্তু নৌসেনার ক্ষমতার নিরিখে আমেরিকার ধারেকাছেও নেই। মাত্র একটা এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার চিনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভির হাতে। ২০০৮ সালে ওই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটিকে ইউক্রেনের কাছ থেকে কিনেছিল চিন। কেনার পর সেটির মেরামতি এবং কিছুটা আধুনিকীকরণ হয়েছে। কিন্তু আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহের পক্ষে তা কতটা উপযুক্ত, চিন নিজেও তা নিয়ে সন্দিহান। তাই লিয়াওনিং নামে ওই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটিকে পুরোদস্তুর সামরিক রণতরী হিসেবে নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত করেনি চিন। সেটিকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

চিনা এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের সক্ষমতা কেমন?

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারগুলির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া চিনের লিয়াওনিং-এর পক্ষে খুব কঠিন। ১৮৮৮ সালে সোভিয়েত রাশিয়া তৈরি করেছিল যুদ্ধজাহাজটি। যুদ্ধবিমান বহনের ক্ষমতা থাকলেও, পুরোদস্তুর এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার হিসেবে সেটিকে তৈরি করা হয়নি। বরং সাবমেরিন অভিযানে সাহায্য করার লক্ষ্যে ক্রুজার-এয়ারক্র্যাফ্ট সাপোর্ট শিপ হিসেবে সেটিকে ব্যবহার করা হত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওই যুদ্ধজাহাজ ইউক্রেনের ভাগে পড়ে। ২০০৮ সালে ১২০ বছর বয়স হয়ে যাওয়া যুদ্ধজাহাজটি কিনে নেয় চিন। কিছুটা মেরামতি এবং কিছুটা আধুনিকীকরণের পর লিয়াওনিং নাম দিয়ে ওই যুদ্ধজাহাজকে চিনা নৌসেনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০১২ সালে। ৩৬টি যুদ্ধবিমান বহন করার ক্ষমতা রয়েছে লিয়াওনিং-এর। আধুনিকীকরণও হয়েছে। কিন্তু আজ থেকে ১২৮ বছর আগে নির্মিত একটি যুদ্ধজাহাজ পুরোদস্তুর সামরিক কাজের জন্য খুব একটা যে উপযুক্ত হবে না, তা চিনা নৌসেনার কর্তারাও জানেন। তাই প্রশিক্ষণের কাজেই মূলত সেটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মার্কিন নৌসেনা অনেক এগিয়ে:

এই মুহূর্তে ২০টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার রয়েছে মার্কিন নৌসেনার হাতে। তার মধ্যে ১৯টি পুরোদস্তুর সামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। আরও তিনটি তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোনও নৌসেনা মার্কিন নৌসেনার ধারেকাছে নেই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের সংখ্যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে চিন যদি আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়, তা হলে মার্কিন নৌসেনার সামনে দাঁড়াতেই পারবে না পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভি। নিজেদের বিমান বাহিনীর ভরসায় আমেরিকার মোকাবিলা করার কথা ভাবছে বেজিং। কিন্তু মার্কিন বিমানবাহিনীও চিনা বিমানবাহিনীর থেকে এগিয়ে। ফলে চিনা যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে মার্কিন নৌসেনার উপর অবাধে আগুন ঝরাতে পারবে, তেমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে জলভাগের যুদ্ধে বিপুল পরাজয়ের মুখ দেখতে হতে পারে লাল ফৌজকে।

চিনের চেয়ে এগিয়ে ভারতীয় নৌসেনাও:

এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের সংখ্যায় ভারতীয় নৌসেনাও এগিয়ে রয়েছে পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভির চেয়ে। ভারতের হাতে এই মুহূর্তে দু’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার— আইএনএস বিরাট এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্য। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত আইএনএস বিক্রান্ত নামে আরও একটি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ভারতের হাতে ছিল। কিন্তু পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেটিকে বাতিল করে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে আরও একটি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরি হচ্ছে কোচিতে। সেটির নামও দেওয়া হচ্ছে আইএনএস বিক্রান্ত। চিনও নিজেদের দ্বিতীয় এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারটি তৈরি করছে। কিন্তু সেটি তৈরি হয়ে য়াওয়ার পরেও ভারতীয় নৌসেনার সমকক্ষ তারা হতে পারবে না। কারণ ভারতের সবক’টি এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারই পুরোদস্তুর সামরিক ব্যবহারের উপযুক্ত। চিনের ক্ষেত্রে তা নয়।

আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি, নিয়ন্ত্রণ রেখা মুছে দেওয়ার ডাক

আমেরিকার নৌসেনার চেয়ে নিজেদের নৌসেনা যে যোজন যোজন পিছিয়ে, তা বেজিং জানে। এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের সংখ্যায় যে প্রতিবেশী ভারতও বেশ এগিয়ে গিয়েছে, তাও স্পষ্ট চিনের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই বেজিং-এর কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।

Chinese Navy People's Liberation Army Navy Aircraft Carrier Only One Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy