Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪

দৃষ্টিহীন পড়ুয়াকে হেনস্থা লন্ডনে, কৃষ্ণাঙ্গ বলেই কি?

ঘানার বাসিন্দা, ২৫ বছর বয়সি ইবেনেজ়ার আজ়ামাটি লন্ডনে থেকে পিএইচডি করছেন। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের বিতর্কসভায় যোগ দেওয়া নিয়ে প্রবল উৎসাহী ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর চিন্তা ছিল, প্রতিবন্ধীদের জন্য দর্শকাসনে নিশ্চয় কোনও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে না।

বিতর্কসভায় হেনস্থা করা হচ্ছে আজ়ামাটিকে (ইনসেটে)। ছবি: ফেসবুক

বিতর্কসভায় হেনস্থা করা হচ্ছে আজ়ামাটিকে (ইনসেটে)। ছবি: ফেসবুক

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

অক্সফোর্ড ইউনিয়নের প্রখ্যাত বিতর্কসভা। আগেভাগে এসে দর্শকাসনে বসার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ দৃষ্টিহীন ছাত্রটি। অভিযোগ, সেই অনুষ্ঠান থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে দেওয়া হয় তাঁকে। শুধু তা-ই নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে ওই ছাত্রকেই দোষী ঠাওরানো হয়। দেওয়া হয় শাস্তিও।

ঘানার বাসিন্দা, ২৫ বছর বয়সি ইবেনেজ়ার আজ়ামাটি লন্ডনে থেকে পিএইচডি করছেন। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের বিতর্কসভায় যোগ দেওয়া নিয়ে প্রবল উৎসাহী ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর চিন্তা ছিল, প্রতিবন্ধীদের জন্য দর্শকাসনে নিশ্চয় কোনও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে না। তাই ওই দিন আগেভাগে নিজের জন্য একটি আসনের ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন। প্রেক্ষাগৃহের প্রবেশদ্বারের সামনে একটি চেয়ারের উপরে বই রেখে রাতের খাওয়া সারতে যান আজ়ামাটি। এর পরে যখন প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে যান, বাধা দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি জোর করে ঢুকে ওই চেয়ারটিতে বসতে যান। একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই আজ়ামাটিকে জোর করে আসন থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে বার করে দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে বাধা দিতে যান আজ়ামাটি। কিন্তু দু’জন লোক তাঁর পা ধরে টেনে বার করে দেন।

এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতে বিশেষ সময় লাগেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ব্রেনডন ম্যাকগ্রা তড়িঘড়ি বলেন, ‘‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে

ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ কিন্তু আজ়ামাটিকে হেনস্থাপর্ব এখানেই শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে জানানো হয়, আজ়ামাটি ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করেছিলেন। তাই তাঁকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। শাস্তিও দেওয়া হয় ছাত্রটিকে। তদন্তকারী কমিটি আ‌জ়ামাটিকে দু’টি পর্বের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিয়ন থেকে সাসপেন্ড করে।

আরও পড়ুন: পুলিশের সমালোচনা চিলির প্রেসিডেন্টের

সাম্প্রতিক এই ঘটনার প্রতিবাদে নামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আফ্রিকা সোসাইটি’। বহু দেশ থেকে বহু জাতিগোষ্ঠীর পড়ুয়ারা অক্সফোর্ডে পড়তে আসেন। বহু ছাত্রছাত্রীই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। পড়াশোনার খরচ চালাতে যাঁরা কাজকর্মও করেন। বিক্ষোভে শামিল হন তাঁরাও। ব্রেনডন ম্যাকগ্রা-র পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

ঘানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পরে ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ়’ থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্নাতকোত্তর করেছেন আজ়ামাটি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ব্রিটেনে বোধহয় আমাকে কেউ চায় না। মানবিক আচরণ করা হয়নি আমার সঙ্গে। সুবিচার তো হয়ইনি।’’

বিতর্কসভায় উপস্থিত থাকা আর এক ছাত্র হেনরি হ্যাটওয়েলও বলেন, ‘‘ও বসার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা চলে আসে। সোজা গায়ে হাত দেয় ওর। ও চেয়ার ধরে বসে ছিল। শেষে পা ধরে টেনে তুলে দেওয়া হয় ওকে।’’

বিচারপ্রক্রিয়ায় আজ়ামাটির প্রতিনিধিত্ব করেছেন ম্যান্সফিল্ড কলেজের অধ্যক্ষা হেলেন মাউন্টফিল্ড। লিখিত বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, আজ়ামাটি কোনও অস্বাভাবিক আচরণ করেননি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। এক জন দৃষ্টিহীনের সঙ্গে এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। হেলেনের বক্তব্য, ‘‘কোনও শ্বেতাঙ্গ দৃষ্টিহীনের সঙ্গে কখনওই এ ধরনের আচরণ করা হত না। কৃষ্ণাঙ্গ বলেই...।’’

চাপের মুখে শনিবার আজ়ামাটির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক আচরণের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ম্যাকগ্রা। ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে দেওয়া ‘শাস্তি’ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ‘অক্সফোর্ড ইউনিয়ন’ একটি স্বাধীন সংস্থা। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Oxford Union Debate Session African Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE