চিন সফরে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী প্রকারান্তরে এ-ও স্বীকার করেছেন যে, আন্তর্জাতিক স্তরে অস্বস্তিতে পড়ার জন্য পাকিস্তান নিজেই দায়ী। ছবি: সংগৃহীত।
ব্রিকস বিবৃতির জোর ধাক্কা। তড়িঘড়ি চিন ছুটলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। চিনে আয়োজিত ব্রিকস শিখর সম্মেলনের প্রথম দিনেই ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সন্ত্রাসের কড়া নিন্দা করেছিল চিন। ব্রিকসের ইতিহাসে প্রথম বার যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলির নাম করা হয়েছিল। অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় ঘোর অস্বস্তিতে ইসলামাবাদ। ক্ষত মেরামত করতেই খোয়াজা আসিফ আজ বেজিং গেলেন বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। চিন সফরে রওনা হওয়ার আগে পাক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ স্বীকারও করেছেন যে, ঘরের মাটিতে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশকে অস্বস্তিতে পড়তেই হবে।
চিন যে ব্রিকসের মঞ্চে ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলির নাম করে নিন্দা করবে, তা পাকিস্তান একেবারেই আশা করেনি। তাই গত ৪ সেপ্টেম্বর ব্রিকসের যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর ইসলামাবাদের কর্তারা বেশ বিস্মিতই হয়েছিলেন। ব্রিকস বিবৃতির বিরোধিতাও করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু তাড়াতাড়িই পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে, ব্রিকস বিবৃতির বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে চুপচাপ বসে থাকলেই বিপদ কাটবে না। গোটা বিশ্বকে বোঝানো না-যাক, ঘনিষ্ঠ মিত্র চিনকে অন্তত বোঝাতে হবে যে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাস প্রশ্নে যে ভাবে ভারতের সুরে সুর মিলিয়েছে চিন, তাতে পাকিস্তানে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। ছবি: এপি।
লস্কর-ই-তৈবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি যে পাকিস্তানের মাটি থেকে কাজ চালায়, সে কথা পাক বিদেশমন্ত্রী প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন। পাক সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে অস্বস্তিতে পড়া ঠেকাতে হলে আমাদের আগে নিজেদের ঘরটাকে গুছিয়ে নিতে হবে।’’ অর্থাৎ ঘরোয়া অরাজকতা তথা জঙ্গি সংগঠনগুলির বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো না গেলে যে পাকিস্তানকে বার বার সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতা তকমা পেতে হবে, সে কথা পাক সরকারও বুঝছে। খোয়াজা আসিফ আরও বলেছেন, ‘‘যাঁরা আমাদের বন্ধু, তাঁদের বোঝাতে হবে যে আমরা আমাদের ঘরটাকে আগের চেয়ে ভাল অবস্থায় নিয়ে এসেছি।’’ এই মন্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে চিনকে এ বার পাকিস্তান বোঝানোর চেষ্টা করবে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চিনকে রুখতে মরিয়া দিল্লির সাহায্য সু চি-কে
পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে চিন নিজেও উদ্বিগ্ন। আজ জঙ্গি সংগঠনগুলো ভারতকে নিশানা করছে ঠিকই। কিন্তু বিপুল বিনিয়োগে তৈরি চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর যে কালকে নাশকতার নিশানা হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া পশ্চিম চিনের শিনচিংয়া প্রদেশে সন্ত্রাসের মূল কারণ যে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট, সেই জঙ্গি সংগঠনও পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়েই চিনে নাশকতা চালাচ্ছে। পাক সরকার ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারছে না। এ নিয়ে বেজিং বেশ বিরক্তও।
আরও পড়ুন: পঞ্চশীলে আস্থা রেখে শান্তি চায় চিন
আমেরিকা আগেই সন্ত্রাস প্রশ্নে তীব্র আক্রমণ করেছে পাকিস্তানকে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারছে না বলে অর্থ-সাহায্য আটকে দিয়েছে আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের একমাত্র মিত্র চিন। তাই চিনের গলায় বেসুর শুনেই তড়িঘড়ি বেজিং ছুটতে হল পাক বিদেশমন্ত্রীকে। বলছেন কূটনীতিকদের একটা বড় অংশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy