ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। তাদের এই হামলার নিন্দায় এ বার সরব হল পাকিস্তান। জানাল, আন্তর্জাতিক আইন মেনে প্রতিরক্ষার অধিকার রয়েছে তেহরানের। যে ভাবে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। সমাজমাধ্যমে এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, এক দিন আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিল পাকিস্তান। তার পরেই কি উলটপুরাণ!
ইজ়রায়েলের সঙ্গে গত সপ্তাহে সংঘাত যখন শুরু হয়, তখন পাকিস্তানের উপর নিজেদের ভরসার কথা প্রকাশ করেছিল ইরান। জানিয়েছিল, ইজ়রায়েল যদি তেহরানে পারমাণবিক হামলা চালায়, তবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশে পারমাণবিক বোমা ফেলবে পাকিস্তান। কিন্তু সংঘাতের আবহে পাকিস্তান জানায়, ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়া উচিত। সেনাপ্রধান আসিম মুনির আমেরিকা সফরেও যান। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তেহরান। নাম না করে পাকিস্তানকে বার্তা দেয়। তার পরেই কি ভোলবদল ঘটল পাকিস্তানের!
রবিবার পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এক্সে নিজেদের বিবৃতি পোস্ট করেছে। সেই বিবৃতি পোস্ট করেছেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে যে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা, পাকিস্তান তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ইজ়রায়েলের হামলার পরে এই হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। এই অঞ্চলে যে ভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।’’ এখানেই থামেনি বিদেশ মন্ত্রক। আরও লিখেছে, ‘‘আমরা স্পষ্ট করছি যে, এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী, ইরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চলছে, তা ‘উদ্বেগজনক’। এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে গোটা অঞ্চলে তার প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। তাদের আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা মনে করি, নাগরিকদের জীবন এবং সম্পত্তিকে সম্মান করা উচিত। এই সংঘাতে এখনই ইতি টানা দরকার। সব পক্ষেরই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা প্রয়োজন।’’ পাকিস্তান এ-ও জানিয়েছে যে, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই এই সংঘাতে ইতি টানা সম্ভব। তা করতে হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনেই।
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য তথা ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর-এর (আইআরজিসি) সিনিয়র জেনারেল মোহসেন রেজ়াই সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদি ইজ়রায়েল ইরানের উপর পরমাণু বোমা ফেলে, তা হলে তারাও পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ইজ়রায়েলকে আক্রমণ করবে।’’ যদিও গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে ইজ়রায়েল সরাসরি হামলা চালানোর পরে পাকিস্তান সরকারের কোনও শীর্ষ আধিকারিককে জনসমক্ষে এ ধরনের বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। তবে তেহরানে হামলার পরেই বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের স্বার্থে ইরানের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় পাকিস্তান। এমনকি, দুই দেশের যুদ্ধে সরাসরি ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েলকে নিশানা করেছেন পাকিস্তানের শীর্ষকর্তারা। এ বিষয়ে পাক বিদেশমন্ত্রী দার বলেন, ‘‘ইরানের উপর ইজ়রায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ইরানের জনগণের পাশে রয়েছে।’’
ইজ়রায়েলের হামলার নিন্দা করলেও আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলছিল পাকিস্তান। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছেন পাক সেনাবাহিনীর প্রধান আসিম মুনির। ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণেই তিনি গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়, পরে তা বিবৃতি দিয়েও জানায় পাকিস্তান। এই আবহে শনিবার ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেওয়ার’ কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম সুপারিশ করে ইসলামাবাদ। তাতে এক প্রকার অসন্তোষই প্রকাশ করে ইরান। যদিও কারও নাম তারা নেয়নি। নয়াদিল্লিতে ইরানি দূতাবাসের উপপ্রধান জাভেদ হোসেইনি বলেন, ‘‘যুদ্ধে কোনও তৃতীয় পক্ষ জড়িয়ে পড়লে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে।’’ কিন্তু তার পরে এক দিন কাটতে না কাটতেই উলটপুরাণ পাকিস্তানের। ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিন্দা করল আমেরিকার। সেটা কি চাপে পড়েই? উঠছে প্রশ্ন।