আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পরেও প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা কুলভূষণ যাদবকে কেন আবেদন করার অধিকার দেওয়া হয়নি? ছ’বছর পরে সুপ্রিম কোর্টে জানাল পাকিস্তান সরকার। অন্য একটি মামলার সূত্রে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আইনজীবী কুলভূষণ মামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। সেখানেই জানানো হয়, আন্তর্জাতিক আদালত কুলভূষণকে ভারতীয় কুটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করার অধিকার দিতে বলেছিল। কিন্তু আবেদন করার অধিকারের বিষয়ে কিছু বলেনি। তাই ভারতের প্রাক্তন এই নৌসেনাকে আবেদনের অধিকার দেওয়া হয়নি।
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বালোচিস্তানে ইরানের সীমান্ত এলাকা থেকে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল কুলভূষণকে। ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, নৌসেনা থেকে সময়ের আগেই অবসর নিয়েছিলেন কুলভূষণ। নিজের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি ইরানের চাবাহার বন্দরে ছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাতে। এখনও পাকিস্তানের জেলেই বন্দি কুলভূষণ।
আরও পড়ুন:
২০১৭ সালে কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক আদালত। ভারত সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে (আইসিজে) মামলা করে। আদালত জানায়, কুলভূষণকে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তা-ও পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্বিচার করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালত এ-ও জানিয়েছিল, কুলভূষণকে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে লঙ্ঘন করেছে।
২০২৩ সালের মে মাসে পাকিস্তানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে বহু মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। অশান্তি ছড়িয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই অশান্তির ঘটনায় যাঁরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের মুক্তি সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে। তাতেই ওঠে কুলভূষণ প্রসঙ্গ। পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হয়ে মামলায় সওয়াল করেছেন আইনজীবী খোয়াজা হ্যারিস আহমেদ। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কেবল কুলভূষণকে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আবেদনের অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়নি। সেই কারণে তাঁকে আবেদনের অধিকার দেয়নি পাকিস্তান। কিন্তু ২০২৩ সালের অশান্তিতে অভিযুক্তদের কোন যুক্তিতে ওই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। কুলভূষণকে আবেদনের অধিকার দেওয়ার জন্য ২০২১ সালে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি একটি বিল পাশ করেছিল। বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতের রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্যেও নির্দিষ্ট আইন এসেছে পাকিস্তানে।