ভারত-চিন সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনটি ‘এম’-এর উত্থাপন করেন জয়শঙ্কর। ফাইল ছবি
সীমান্ত সমস্যার সমাধান একটি দিকে, আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অন্য দিকে— একটি না হলে অন্যটি এগোবে না।
পূর্ব লাদাখের চিনা আগ্রাসনের ঘটনার পর বেজিংয়ের সঙ্গে ক্রমশ এই নীতিকেই জোরদার করছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্যাখ্যা করে সে কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সীমান্ত পরিস্থিতি ভারত-চিন সম্পর্ককে নিরূপণ করবে।’’ একই সঙ্গে চিনের নাম না করে বললেন, ‘‘ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা না করতে পারলে এশিয়া এগোবে না।’’
কোভিড পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে ভারত যত দূর সম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে এগোচ্ছে। আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্বের মন রেখে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার কঠিন কাজটি করে চলেছে সাউথ ব্লক। কিন্তু চিন প্রশ্নে কঠিন এবং সোজাসাপ্টা পন্থা না নিলে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া— এই দু’কূলেই যে সমস্যা বাড়বে এ বার সেই টনক নড়েছে নয়াদিল্লির। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
গত কাল এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনে চিন প্রসঙ্গে জয়শঙ্করের বক্তব্য, ‘‘বর্তমানে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সকলে জানেন। ফের বলতে পারি, সীমান্তের পরিস্থিতিই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করবে।” ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঘটনাবলির উপরে এশিয়ার সমৃদ্ধি নির্ভর করবে। কারও কারও নিহিত স্বার্থ রয়েছে গোটা অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার।”
ভারত-চিন সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনটি ‘এম’-এর উত্থাপন করেন জয়শঙ্কর। তা হল, ‘মিউচুয়াল সেনসিটিভিটি’, ‘মিউচুয়াল রেসপেক্ট’ এবং ‘মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট’। কোনও রাষ্ট্রের নাম না-করে তিনি বলেছেন “আমরা এই আশা করতেই পারি যে এশিয়ার উত্থান হতে থাকবে। সমস্ত সূচক সেই ইঙ্গিত করছে। তবে কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে তা নির্ভর করছে ভিতরের চিড়গুলি কী ভাবে মেরামত করা হচ্ছে তার উপরে। আর সে কারণে আইনের শাসন মেনে চলা জরুরি।’’
এ ছাড়াও জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘প্রথমে ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের বিষয়গুলিকে সম্মান করতে হবে। অঞ্চলে কোনও পদক্ষেপ করতে গেলে প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা জরুরি, তা যেন একতরফা না হয়।” তিনি জানিয়েছেন, বাণিজ্যিক সংযোগের বিষয়টি যেন স্বচ্ছ, নিয়মমাফিক এবং বাজার ভিত্তিক হয়। একই ভাবে উন্নয়নের কর্মসূচিগুলিরও ভিত হওয়া উচিত অনেককে নিয়ে, আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। কোনও একটি দেশের স্বার্থ এখানে মুখ্য নয়।
বক্তৃতায় বহু মেরুবিশিষ্ট বিশ্বের উল্লেখ করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এশিয়ার ভিতরের অন্তর্দ্বন্দ্বকে সামলানোর জন্য প্রথমেই যা করা উচিত, তা হল এর বৈচিত্রকে মেনে নেওয়া। যে হেতু এখানে বহু সংস্কৃতি, অঞ্চল এবং শক্তি রয়েছে ফলে সহজেই একে বহু মেরুর নিদর্শন হিসাবে দেখা যায়। বহু মেরুবিশিষ্ট এশিয়ার প্রয়োজন শুধু এশিয়ার জন্যই নয়, বিশ্বের জন্যই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy