বাইশতম ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পাঁচ বছর পরে মস্কোয় পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পৌঁছে জানালেন, ‘‘আমাদের দু’দেশের মধ্যে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। বিশেষত ভবিষ্যতের ক্ষেত্রগুলিতে সমন্বয় সাধনই লক্ষ্য।’’
ইউক্রেনকে রাশিয়া একতরফা ভাবে আক্রমণ করার পরে মোদীর এই প্রথম মস্কো সফরের দিকে তির্যক নজর রাখছে আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্ব। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালীন জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনকে আবার নতুন মোড়কে ফিরিয়ে এনেছে দিল্লি, এমনটাও মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে মোদীর মস্কোয় পা রাখার দিনেই ইউক্রেনে রুশ হামলার ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
এ দিন অবশ্য মোদীকে স্বাগত জানানোয় ত্রুটি রাখেনি পুতিন প্রশাসন। মস্কো বিমানবন্দরে মোদীকে স্বাগত জানান রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ। গার্ড অব অনার দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে। একই গাড়িতে মোদী ও মান্তুরোভ পৌঁছন হোটেলে। সেখানে মোদীকে স্বাগত জানাতে তৈরি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরা। সেখানেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে মোদীকে স্বাগত জানানো হয়েছে। রুশ মহিলারা ভারতীয় পোশাকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পূর্ব ইউরোপের একক ভাবে দীর্ঘতম মিনার ওস্তাকিনো টাওয়ার মোদীর সম্মানে ভারতের জাতীয় পতাকার তেরঙা আলোয় সাজানো হয়েছে। আজ রাতেই মোদীর সঙ্গে নৈশাহারে বসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই নৈশভোজের আসরে পুতিন মোদীর প্রশংসা করে বলেন, ‘‘আমার মনে আপনার বহু বছরের কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই ফের ভারতবাসী আপনাকে নির্বাচিত করেছেন। আপনার নিজস্ব ধ্যানধারণা আছে। আপনি ভারত ও ভারতবাসীর স্বার্থরক্ষা করতে পারেন।’’ মোদী জবাবে বলেন, ‘‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার একমাত্র লক্ষ্য হল ভারত ও ভারতবাসীর কল্যাণ।’’ আগামিকাল মোদী-পুতিন পৃথক ভাবে এবং দু’দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক হতে চলেছে।
মোদী মস্কোয় পৌঁছনোর আগেই ক্রেমলিনের মুখপাত্রের দাবি, মোদীর রাশিয়া সফরে ঈর্ষাকাতর পশ্চিমি দুনিয়া। এটা স্পষ্ট যে, মোদীর সফরকে সামনে রেখে আমেরিকা ও তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোকে নিশানা করছে রাশিয়া। আগেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তো বটেই, নানা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কথা হবে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ রাশিয়ার সরকারি সংবাদ চ্যানেলকে বলেন, “আমরা মনে করি, আলোচ্যসূচির বাইরের বহু বিষয় নিয়েও দুই রাষ্ট্রপ্রধান কথা বলবেন।” রুশ-ভারত সম্পর্কে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেও জানান তিনি।
পেশকভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পশ্চিমি বিশ্ব মোদীর রাশিয়া সফরকে কী ভাবে দেখছে? ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, “ওরা (পশ্চিম) ঈর্ষাকাতর। একবগ্গা ভাবে এই সফরের দিকে নজর রাখছে। এই নজরদারি দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।”
সোমবার সকালে রাশিয়ার বিমান ধরার আগে এক বিবৃতিতে মোদী লেখেন, ‘‘২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ায় যাচ্ছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে অস্ট্রিয়াতেও যাব। ওই দেশে আমার প্রথম সফর।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘গত ১০ বছরে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শক্তি, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বন্ধু পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং মত বিনিময় করব।’’
প্রসঙ্গত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমেরিকা-সহ ন্যাটোর দেশগুলি রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্য দিকে ভারসাম্যের কূটনীতিতেই ভরসা রেখেছে দিল্লি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)