E-Paper

ভুগছিলেন দুরারোগ্য ক্যানসারে, বাংলা সাহিত্যের দূত উইলিয়াম রাদিচের জীবনাবসান

দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন কবি, অনুবাদক, গবেষক উইলিয়াম রাদিচে। ১০-১১ বছর আগে ইংল্যান্ডে গুরুতর দুর্ঘটনার জেরেও কিছুটা অশক্ত হয়ে পড়েন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৪
উইলিয়াম রাদিচে।

উইলিয়াম রাদিচে। —ফাইল চিত্র।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানা সময়ের কবিতা তাঁর তর্জমায় পৌঁছে গিয়েছিল ইংরেজিভাষী পাঠকমহলে। সেই সঙ্গে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ থেকে রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী গল্প বা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’ও ভাষান্তরের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। ইংরেজিভাষী বহির্বিশ্বে এ ভাবেই বাংলার ভাষা, সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ দূত হয়ে ওঠেন তিনি। বিলেতের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ‘স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ়’-(সোয়্যাস) এর বাংলা ভাষার অধ্যাপক তথা কবি, গবেষক, অনুবাদক উইলিয়াম রাদিচে রবিবার কেমব্রিজে প্রয়াত হয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। উইলিয়ামের স্ত্রী এলিজ়াবেথের থেকে আসা ইমেলে তাঁদের বন্ধুবলয়ে খবরটি জানানো হয়। তাঁদের দুই কন্যা রয়েছেন।

দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন এই কবি, অনুবাদক, গবেষক। ১০-১১ বছর আগে ইংল্যান্ডে গুরুতর দুর্ঘটনার জেরেও কিছুটা অশক্ত হয়ে পড়েন। রাদিচের মা বেটি রাদিচেও ছিলেন ধ্রুপদী ল্যাটিন সাহিত্যকর্মের বিশিষ্ট অনুবাদক ও সম্পাদক। তবু সত্তরের দশকের গোড়ায় উইলিয়াম অক্সফোর্ডে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার সময়েও তাঁর ঘনিষ্ঠরা বোঝেননি, তিনি বাংলা শেখায় আগ্রহী হবেন। কারও কারও ধারণা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে আলোড়নেই হয়তো বাংলার প্রতি আগ্রহ বাড়ে তাঁর। তবে এর কিছু দিনের মধ্যে সোয়্যাস-এ বাংলা ভাষার ছাত্র হিসেবে উইলিয়ামের মতো মেধাবী এক জনকে দেখে শিক্ষকেরা চমৎকৃতই হয়েছিলেন। সেখানে অধ্যাপক তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন উইলিয়াম। উইলিয়ামের পুরনো বন্ধু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “খবরটা পেয়ে খুবই খারাপ লাগছে। বিশ শতকের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বহির্বিশ্বে নতুন করে আগ্রহ সঞ্চারের নেপথ্যে উইলিয়ামের তর্জমায় কবিতাগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নিয়ে গবেষণা করেন উইলিয়াম। তর্জমাও করেন ‘দ্য পোয়েম অব দ্য কিলিং অব মেঘনাদ’। উইলিয়ামের ভাষান্তরে ‘দেবতার গ্রাস’ (স্ন্যাচড বাই দ্য গডস)-এর অপেরাধর্মী উপস্থাপনা করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সুরকার পরম বীর। ‘জীবিত ও মৃত’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘কাবুলিওয়ালা’র ভাষান্তর ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের ‘কণিকা’, ‘লিখন’, ‘স্ফুলিঙ্গ’-এর অণুকবিতাগুলি নিয়ে উইলিয়ামের সৃষ্টি ‘পার্টিকলস, জটিংস, স্পার্কস’। ‘টুনটুনির বই’ তাঁর হাতে হয়ে ওঠে ‘দ্য স্টুপিড টাইগার অ্যান্ড আদার টেলস’। রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি ভাষান্তরের মূল পাণ্ডুলিপি এবং ইয়েটসের পরামর্শে তা পরিমার্জনের ধাপে ধাপে রূপান্তর নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন উইলিয়াম। তাঁর নিজের ইংরেজিতে লেখা কবিতা সম্ভারও রয়েছে।

বিশ্বভারতীর শিক্ষাপ্রাঙ্গণেও অনেকের চোখে উইলিয়ামের কাজে ডুবে থাকা তন্ময় মূর্তিটি গেঁথে রয়েছে। কলকাতায় রবীন্দ্রসঙ্গীতবিদ, গবেষক দেবাশিস রায়চৌধুরীর সঙ্গেও উইলিয়ামের বহু বছরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ২০১২ নাগাদ কলকাতায় ইংরেজিতে ‘রাজা’ নাটকের রাজার ভূমিকায় উইলিয়ামকে রাজি করিয়ে অভিনয় করানোর কথাও দেবাশিসের মনে পড়ে যাচ্ছে।

এডিনবরায় স্কটিশ সেন্টার অব টেগোর স্টাডিজ়-এর প্রধান বাসবী ফ্রেজ়ার বলেন, “উইলিয়াম যে ভাবে চেয়েছিলেন, সেই ভাবে নিজের বিছানায় শান্তিতে তিনি বিদায় নিয়েছেন বলে স্ত্রী এলিজ়াবেথ জানিয়েছেন। বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হল। উইলিয়ামের মতো মানুষ বিরল। উদার মানবতাবাদে তিনি আলো দেখিয়েছেন, আশা জাগিয়েছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cambridge Death Poet Writer Translator

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy