Advertisement
E-Paper

জঙ্গিত্রাস এসপি-র স্ত্রী খুন চট্টগ্রামে

জঙ্গি দমনে বরাবরই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিজের জীবন নিয়ে না ভাবলেও তাই পরিবারের জন্য সর্বদায় শঙ্কিত থাকতেন পুলিশকর্তা বাবুল আক্তার। সাংবাদিক-সহকর্মীদের কাছেও নিজের এই উদ্বেগের কথা লুকোতেন না তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৪০
পুলিশকর্তা বাবুল আক্তারের নিহত স্ত্রী মাহমুদা খানম। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশকর্তা বাবুল আক্তারের নিহত স্ত্রী মাহমুদা খানম। —নিজস্ব চিত্র

জঙ্গি দমনে বরাবরই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিজের জীবন নিয়ে না ভাবলেও তাই পরিবারের জন্য সর্বদায় শঙ্কিত থাকতেন পুলিশকর্তা বাবুল আক্তার। সাংবাদিক-সহকর্মীদের কাছেও নিজের এই উদ্বেগের কথা লুকোতেন না তিনি।

বাবুলের সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। রবিবার সকালে চট্টগ্রামের জিআইসি মোড়ে বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে (৩৩) কুপিয়ে, গুলি করে খুন করল তিনটি মোটরবাইকে করে আসা অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার তদন্তে নেমে জেরার জন্য দামপাড়া কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা থেকে দুই সন্দেহভাজনকে আটক করেছে র‌্যাব। গোয়েন্দা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোক্তার আহমেদ বলেন, ‘‘জঙ্গি দমনে অনেক কাজ করেছেন বাবুল। প্রাথমিক ভাবে তাই মনে করা হচ্ছে জঙ্গিরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গত এপ্রিলে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়েছেন বাবুল। গত সপ্তাহেই যোগ দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ সদর দফতরে। এ দিন সকালে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম রওনা দেন তিনি।

হিংসাত্মক এই ঘটনা চট্টগ্রামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে নাটোরকেও। রবিবারই নাটোরে সুনীল গোমেজ নামে ৬০ বছরের এক খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। নাটোরের বনপাড়ায় মিশনপল্লির খ্রিস্টানপাড়ার বাসিন্দা সুনীল একটি মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। এ দিন দুপুরে সেই দোকানের মধ্যে সুনীলের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর গলায় এবং ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দাগ রয়েছে। আইএস জঙ্গি সংগঠনের সংস্থা ‘আমাক’-কে উদ্ধৃত করে একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইএস।

এর আগে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় বাংলাদেশে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাস, ওয়াশিকুর রহমান, নিলয় নীল, নাজিমুদ্দিন সামাদ প্রমুখ ব্লগার। গত ২১ ফেব্রুয়ারি খুন হন পঞ্চগড় জেলার সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়। সেই তালিকায় ঢুকে গেলেন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা এবং সুনীল।

অপরাধ দমনে বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন মাহমুদার স্বামী বাবুল। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালীন গত বছরের অক্টোবরে কর্ণফুলি থানার খোয়াজনগর এলাকায় জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ঘাঁটির খোঁজ পান বাবুল। গ্রেফতার করেন জেএমবি-র চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মহম্মদ জাবেদ-সহ পাঁচ জঙ্গিকে। উদ্ধার করেন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। এখানেই জঙ্গিরা তাঁকে লক্ষ করে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল। অল্পের জন্য রক্ষা পান বাবুল। এই সব কারণে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পদক।

তা হলে বাবুলকে হত্যা করতে না পেরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই কি জঙ্গিরা তাঁর স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করল? সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্রশ্নটা।

এ দিন চট্টগ্রামে কী ঘটেছিল? প্রতিদিনকার মতো এ দিন সকালেও নিজের আট বছরের ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন মাহমুদা। জিআইসি মোড়ের কাছে তিনটি মোটরবাইকে করে আসে দুষ্কৃতীরা। মাহমুদার ছেলে জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তার পর মাহমুদাকে ছুরি মারে এবং মাথায় গুলি করে। ঘটনাস্থলেই মাহমুদার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মাহমুদার শরীরে আটটি কোপানোর দাগ রয়েছে। গুলির চিহ্ন রয়েছে বাঁ চোখের উপরে। মাহমুদার খুনের তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এ দিনই নাটোরে উদ্ধার হয় খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজের দেহ। রবিবার হওয়ায় গির্জায় প্রার্থনা করে এসে বাড়ি লাগোয়া মুদিখানার দোকানে বসেছিলেন তিনি। এর কিছু পরেই দুই ভ্যানওয়ালা পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দোকানে সুনীলকে গলাকাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা সুনীলকে মৃত বলে ঘোষাণা করেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, খুনিরা ক্রেতা সেজে সুনীলের দোকানে এসে তাঁকে খুন করে পালিয়ে যায়।

killed Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy