এক সুরে: পোপ ফ্রান্সিসকে স্বাগত জানাচ্ছেন আউং সান সু চি। মঙ্গলবার নেপিদও-এ। ছবি: এএফপি
সব পক্ষেরই নজর ছিল, কী বলেন তিনি! এক কালে যাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমাদের রোহিঙ্গা ভাইবোনের সঙ্কটে আমি ব্যথিত’’, আজ সে মুখে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটা এক বারও উচ্চারিতই হল না।
মায়ানমার সফররত পোপ ফ্রান্সিসের প্রতিক্রিয়ায় তাই হতাশ অনেকেই। দেশের সেনাপ্রধানের পাশাপাশি পোপের দেখা হয়েছে সরকারের পরামর্শদাতা আউং সান সু চি-র সঙ্গে। বৈঠকের পরে পোপ ফ্রান্সিস শুধু বলেন, ‘‘সব জাতিগোষ্ঠী ও পরিচয়ের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো উচিত।’’
সু চি-র পাশে দাঁড়িয়ে এমন সুরেই কথা বলেছেন পোপ। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের উপরে সেনার নির্যাতন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরব হলেও সু চি-র মুখ থেকে কোনও আপত্তিই শোনা যায়নি। মায়ানমারে গণতন্ত্রকামী নেত্রী সু চি-র এই নীরবতায় সমালোচনার ঝড় বয়েছে।
মায়ানমারের মাটিতে দাঁড়িয়ে পোপের কথাতেও তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। যে দেশে ‘জাতি নিধন’ চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ, সেখানে পোপ বলে গেলেন, ‘‘শান্তি ও জাতীয় স্তরে ঐক্য ফেরাতে কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যাতে মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান রক্ষা হয়।’’ পোপের পাশে দাঁড়িয়ে সু চি-ও বলে গেলেন সাধারণ কিছু কথাই। তবে এক বার রাখাইন প্রদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি।
মায়ানমার এবং বাংলাদেশ— পোপের সপ্তাহব্যাপী সফরসূচিতে রয়েছে দু’দেশই। কিন্তু মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের যে বিপুল সংখ্যক নিপীড়িত এবং বিতাড়িত মানুষকে বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে, তা নিয়েও একটি শব্দ খরচ করেননি পোপ। উল্টে সু চি-র প্রতি সমর্থন দেখিয়ে তিনি অবাক করেছেন অনেককেই। বক্তৃতা দেওয়ার আগে অল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ হয় দু’জনের। পরে পোপ বলেন, কয়েক দশকের সেনা শাসনের পরে মায়ানমারে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে যে ভাবে সু চি এক ছাতার তলায় আনতে পেরেছেন, তা প্রশংসনীয়।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই অবশ্য সু চি-কে দেওয়া সম্মান ফিরিয়ে নিয়ে অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, হিংসা নিয়ে নীরব থেকে সু চি তাদের
প্রতিষ্ঠানকেই কলঙ্কিত করেছেন। তাই নেত্রীকে দেওয়া ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি’ পুরস্কার’ ফিরিয়ে নিচ্ছে তারা।
এ হেন পরিস্থিতিতে সু চি-র প্রশংসা এবং রোহিঙ্গা শব্দটা এড়িয়ে যাওয়ায় পোপকে নিয়ে যথেষ্ট হতাশ মানবাধিকারের আন্দোলনকারীরা। হতাশ রোহিঙ্গাদের পক্ষে সওয়ালকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীও। রাখাইন প্রদেশের বাইরে সিত্বের এক শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা কও নেইং বলছেন, ‘‘ভেবেছিলাম পোপ অন্তত আমাদের দুর্দশার কথা বলবেন। কিন্তু উনি রোহিঙ্গা শব্দটা উচ্চারণই করলেন না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া শাখার উপ-অধিকর্তা ফিল রবার্টসনের আশা, কালকের বিশেষ প্রার্থনায় (মাস) পোপ হয়তো রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করবেন। কাল এ দেশে পৌঁছনোর পরে পোপের দেখা হয়েছিল সেনাপ্রধান জেনারেল মিন আউং লাইংয়ের সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের উপরে নিপীড়নের জন্য আঙুল উঠেছে এই জেনারেলের দিকেই। পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে জেনারেলের দফতর ফেসবুকে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘পোপ সব সম্প্রদায়ে বিশ্বাস, শান্তি, ঐক্য এবং ন্যায় বজায় রাখার কথা বলেছেন। পোপকে বলা হয়েছে, মায়ানমারে জাতিভিত্তিক বা ধর্মভিত্তিক কোনও বৈষম্য নেই।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy