Advertisement
১৮ মে ২০২৪

সাইবার হানায় কান্নাকাটি শ’খানেক দেশ জুড়ে

পণবন্দি করার এ-ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তবে কোনও ব্যক্তিকে নয়। সাইবার দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্যকে। যা পণবন্দি করলে বিগড়ে যেতে পারে যে কোনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

পণবন্দি করার এ-ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। তবে কোনও ব্যক্তিকে নয়। সাইবার দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্যকে। যা পণবন্দি করলে বিগড়ে যেতে পারে যে কোনও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা! সেই ষড়যন্ত্র কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা দেখল ইউরোপ-এশিয়ার শ’খানেক দেশ। আচমকা সাইবার হানার জেরে রীতিমতো কান্নাকাটির দশা হয়েছে একাধিক দেশের প্রশাসনিক প্রধান বা বাণিজ্য কর্তাদের।

হবে না-ই বা কেন! ভাইরাসটির নামও তেমন। ‘ওয়ান‌্না ক্রাই’। সাইবার জগতের খবর, এই ভাইরাস তৈরি হয়েছিল মার্কিন সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ (এনএসএ)-র অন্দরেই। ‘শ্যাডো ব্রোকার্স’ নামে একটি হ্যাকার গোষ্ঠী তাদের ভাঁড়ার থেকে সে’টি চুরি করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ধরনের হানাকে অভূতপূর্ব বলে ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইউরোপোল’ জানিয়েছে, অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল গড়া প্রয়োজন।

সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাইবার হানা হয়েছে ভারত-সহ এশিয়া-ইউরোপের অন্তত ১০০টি দেশে। অন্তত ১ লক্ষ সার্ভার সিস্টেমসে ভাইরাসের উপস্থিতি মালুম হয়েছে। যার জেরে বহু কম্পিউটারের ফাইল ব্যবহারকারীদের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। ওই ভাইরাসের জাল ভেদ করার কোড দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৩০০ ডলার করে চেয়েছে অপরাধীরা। মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড় দেওয়ার এই ধরনের ভাইরাসকে সাইবার জগতে ‘র‌্যানসমঅয়্যার’ বলা হয়।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘র‌্যানসমঅয়্যার’-এর হানা নতুন নয়। কিন্তু এত বড় মাপে আগে হয়নি। গত ১৪ এপ্রিল এই অস্ত্রের কথা প্রথমে সামনে এনেছিল ‘শ্যাডো ব্রোকার্স’। অনলাইনে তারা জানিয়েছিল, এনএসএ-র ভাঁড়ার থেকে এই ভাইরাস চুরি করা হয়েছে। কিন্তু সে সময় তা কেউ আমল দেয়নি। কিন্তু সেই হুমকি যে সত্যি হবে, তা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছেন সবাই। এই পরিস্থিতিতে এনএসএ-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও এনএসএ এই ধরনের ভয়ঙ্কর হাতিয়ার তৈরি করেছিল। তার ফল আজ ভুগতে হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন:ওসামার মৃত্যুর বদলা চান ছেলে

এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় কী?

সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, কম্পিউটারের অ্যান্টিভাইরাসের ‘অফলাইন’ ব্যাকআপ রাখতে হবে। এ সময়ে অচেনা ওয়েবসাইট বা পর্ন সাইট এড়িয়ে চলাই ভাল। অচেনা মেল এলে বা কোনও লিঙ্ক এলে তাতে ক্লিক করা ঠিক হবে না। এ সবের থেকেই র‌্যানসমঅয়্যার ছড়াতে পারে। ইতিমধ্যে এক সাইবার গবেষক একটি ফরাসি সংবাদ সংস্থার কাছে দাবি করেছেন, এই হামলাকারী ভাইরাসকে খতম করার জন্য পাল্টা প্রযুক্তিও বের করে ফেলেছেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলার কথা শুক্রবার প্রথমে ধরা পড়েছিল সুইডেন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সে। তার পরে পরে রাশিয়া, ইউক্রেন, ইতালি, চিন, ভারত ও মিশরের সার্ভার-কম্পিউটারগুলিতেও এই ভাইরাস ঢুকে পড়ে। সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘অ্যাভাস্ট’-এর হিসেবে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৭৫ হাজার কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকে পড়েছিল এই ভাইরাস।

এই সাইবার হানার জেরে ব্রিটেনে বেশ কিছু হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। রাশিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ও রেল বিগড়ে যায়। মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি-বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল জানিয়েছে, সে দেশের প্রচুর কম্পিউটারে এই ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। মার্কিন সংস্থাটি এ-ও জানিয়েছে, অপরাধীদের দাবি মেনে মুক্তিপণ দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, মুক্তিপণ দিলেই ছাড় মিলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ransomware Cyber Attack Virus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE