বোর্নমাউথের দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর ভোগের স্বাদ-গন্ধ একেবারেই আলাদা। বর্ষাকালের বাড়ির খিচুড়ি যতই ভাল রান্না হোক না কেন, তার তুলনাতেই আসে না। ধূপধুনো, ফুলের গন্ধ মেশা সপ্তমী থেকে নবমীর ভোগের অপেক্ষা তা-ই সারা বছর করেন লন্ডন উপকণ্ঠের আটলান্টিক ঘেঁষা বোর্নমাউথের বাঙালিরাও।
খুব বেশি বাঙালি পরিবার নেই সেখানে। দুর্গাপুজোয় ফেলে আসা মাটির কথা ভেবে মনখারাপ না হয়, তাই দশটি পরিবার মিলে ২০১৬ সালে প্রথম বার আয়োজন করেছিলেন দশভূজা আরাধনার। ‘ডরসেট ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’-এর নামে। এখন নয়-নয় করে প্রায় ৩০টি পরিবারের সকলে ভিড় জমান সেই পুজোয়। বিদেশের ব্যস্ততায় সপ্তাহ শেষে নয়, পঞ্জিকা মেনে পাঁচ দিন ধরে পুজো হয় বোর্নমাউথে। কলা বৌ স্নান, নবপত্রিকা, সন্ধিপুজো, দর্পণ বিসর্জন— সব হয় নিয়ম মেনে। সিঁদুর খেলাও হয় কলকাতা, বাংলার আমেজেই। ভোগ রান্না করেন পুজোর উদ্যোক্তারাই। পুজোয় মালা গাঁথেন মহিলারা। নাড়ুর গন্ধে ম-ম করে গোটা অডিটোরিয়াম।
কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা এসেছিল ২০১৭ সালে। প্রতি বার পুজোর পরে সযত্নে তা রেখে দেওয়া হয় সুদৃশ্য বাক্সে। পরের বছরের জন্যে। ঠাকুরমশাই থাকেন এ শহরেই। ঢাক, কাঁসরও রয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে। ঢাক বাজান আয়োজকদেরই কয়েক জন। তা অনেক মজারই।
দুর্গাপুজো হবে, আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না, তা নয়। যে যা পারেন, কেউ গান, কেউ নাচ, কেউ আবৃত্তি— পুজোর সন্ধ্যায় বসে সে সবের আসর। অন্তাক্ষরী আর কুইজের পুরস্কার তো বাড়তি পাওনা।
বাংলার মাটি থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে পুজোর বাঙালি সাজে একসঙ্গে অঞ্জলি, ভোগ খাওয়া, নির্ভেজাল আড্ডায় কখন যেন মিশে যায় কলকাতার আমেজ, আবেগ। সঙ্গে ছোটদের কলতান তো থাকেই।
এ শহরের কাছাকাছি অন্য পুজো হয় প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের সাউদাম্পটনে। তা-ই বোর্নমাউথের বাঙালিদের ভিড় জমে ডরসেটের পুজোতেই।
পুজোর পাঁচ দিন ভিনদেশি আদব-কায়দা সরিয়ে সকলে যেন ফিরে যান নিজেদের কৈশোরের দিনে। বাংলা থেকে দূরে বসেই সে ক’দিন মেলে দেশের মাটির গন্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy