Advertisement
১১ মে ২০২৪
Russia

Russia-Ukraine War: সীমান্ত পেরোনোর আগে সংজ্ঞাহীন! অসমের ছাত্রের সেবায় ইউক্রেনীয়েরা

ঘটনার আকস্মিকতায় বিধ্বস্ত যুবক পিছনের ক’টা দিন মনে করতেই বার বার আতঙ্কিত এবং উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন।

ফাইল চিত্র।

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৬
Share: Save:

যুদ্ধ কবলিত ভিন্ দেশ থেকে ঘরে ফেরার চেষ্টা‌। কিন্তু সীমান্ত পেরোনোর আগেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। সেই সুযোগে সর্বস্ব লুট। কনকনে শীতে গরম জামা-জুতো লুট করতেও কার্পণ্য করেনি লুটেরা‌। এমন অবস্থায় এক ইউক্রেনীয় পরিবারে তিন রাতের আশ্রয় মেলে। অবশেষে প্রবাসী বাঙালির সাহায্যে পোল্যান্ডের অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে সীমান্ত পার। জীবনের এমনই ঘটনাবহুল কয়েকটি দিন কাটিয়ে আজ, শুক্রবার পোল্যান্ড থেকে উড়ানে ফিরছেন অসমের গুয়াহাটির বাসিন্দা এক যুবক। ঘটনার আকস্মিকতায় বিধ্বস্ত যুবক পিছনের ক’টা দিন মনে করতেই বার বার আতঙ্কিত এবং উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ঘোষণা করতেই দেশে ফেরার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ওই পড়ুয়া। পোল্যান্ডের মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পারাপারের উদ্দেশ্যে পশ্চিম ইউক্রেনের টার্নোপিল থেকে বাসে ওঠেন তিনি। বাস প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন যুবক। তাঁর সঙ্গে ছিল ৫০ কিলোগ্রাম ওজনের ভারী ট্রলি। তীব্র ঠান্ডায় তিরিশ কিলোমিটার পথ ব্যাগ-সহ হেঁটে দীর্ঘ লাইনে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়াতে হচ্ছিল। ও ভাবে আঠারো ঘণ্টা থাকার পরে তাঁর পায়ের কোনও সাড় ছিল না। সমস্ত শরীর ছেড়ে দেয়। আর কিছু মনে করতে পারেন না বলে জানাচ্ছেন যুবক।

জ্ঞান ফিরলে দেখেন, জিনিসপত্র-সহ ব্যাগ, ঘড়ি, গরম জ্যাকেট এমনকি জুতোও উধাও। ছিনতাইকারীরা ছেড়ে গিয়েছিল শুধু মোবাইল আর নথিপত্র। মাইনাস তাপমাত্রার ঠান্ডায় খালি পায়ে সামান্য হেঁটেই আর চলার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। কোনও মতে বাড়িতে ও অসমের এক বন্ধুকে ফোন করে সব জানান যুবক। সেই বন্ধুই ফেসবুকে অসমের ম্যারাথন দৌড়ের গ্রুপ ‘রানার’-এ সে কথা জানিয়ে যুবকের হয়ে সাহায্য চান। একটি নাম ও নম্বর সেখান থেকেই মেলে।

বিবেকানন্দ দত্ত। গুয়াহাটিরই বাসিন্দা সেই যুবক গত দশ বছর ধরে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ শহরে আছেন। পিএইচডি-র পরে বর্তমানে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তে
আটকে পরা ভারতীয় পড়ুয়াদের সাহায্যে অনেকের মতো এগিয়ে এসেছেন বিবেকানন্দও। নিজের শহরের ভাইকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন একা নয়, ভারতীয়দের সঙ্গে থাকতে। কারণ, সীমান্ত টপকে তাঁকে আনার ক্ষমতা বিবেকানন্দের নেই। কথার ফাঁকেই বিবেকানন্দ শোনেন, অসমের ওই যুবক ইউক্রেনীয় ভাষায় কারও কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন।

এর পরের অধ্যায় সিনেমার মতো। পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র পনেরো কিলোমিটার দূরের ছোট্ট সাজানো শহর মসটিস্কার বাসিন্দা এক ইউক্রেনীয় পরিবার সব শুনে তাঁকে আশ্রয় দেয়। সেখানে তিন রাত ছিলেন যুবক। তাঁকে ওষুধ ও খাবার দেওয়ার পাশাপাশি, গরম জামা, জুতোও দেন তাঁরা। এ দিকে বিবেকানন্দও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন যুবক ও তাঁর অসমের পরিবারের সঙ্গে। ভারতীয়দের দ্রুত ইউক্রেন ছাড়ার জন্য মঙ্গলবার ভারতীয় দূতাবাসের তরফে নির্দেশিকা জারি হতেই বিবেকানন্দ যুবককে সীমান্তে পৌঁছতে বলেন। তাঁকে দশ কিলোমিটার আগে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দিয়ে যায় ইউক্রেনীয় পরিবারটি।

ফের কিছুটা হেঁটে যখন আর পারছিলেন না, তখন ত্রাতা হয় একটি অ্যাম্বুল্যান্স। যুবকের সঙ্গে ভিডিয়ো কল চলাকালীন বিবেকানন্দ খেয়াল করেন, পিছনে দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্সে পোল্যান্ডের নম্বর প্লেট লাগানো। ভিতরে থাকা নার্সের সঙ্গে যুবকের ফোনেই কথা বলে নেন বিবেকানন্দ। তিনি অসুস্থ যুবককে দেখে রাজি হয়ে যান মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পারাপারা করাতে। এর পরে পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে বিবেকানন্দ তাঁকে নিয়ে যান হোটেলে, যেখানে অন্য ভারতীয় পড়ুয়ারা থাকছেন।

সব কিছু হারিয়ে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত যুবক বলছেন, ‘‘শরীরের তাপমাত্রা নেমে বা রক্তের শর্করা কমে গিয়ে সম্ভবত সংজ্ঞাহীন হয়েছিলাম। ওই ইউক্রেনীয় পরিবারের কাছে চিরঋণী হয়ে রইলাম। কৃতজ্ঞ বিবেক স্যরের কাছে। দুঃসময়ে পোল্যান্ডের ওই অ্যাম্বুল্যান্সও পাশে থেকেছিল। খুব ক্লান্ত। জানি না কত ক্ষণে ঘরে ফিরতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Russia Ukraine War guwahati Indian Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE