নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরের বাইরে পুতিন বিরোধী স্লোগান। ছবি: রয়টার্স
একটি, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরে দুই দেশের লড়াই। রাশিয়ার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইউক্রেনবাসীর প্রতিরোধ। আর একটি লড়াই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই বিষাক্ত মনোভাবের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে অক্লান্ত লড়াই চালাচ্ছেন নেটিজেনরা।
ইউরোপ-আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় হামলা ও ধ্বংসকাণ্ড জনিত বিস্ময় আর হতাশার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে বর্ণবৈষম্যের গরল। সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদের জেরে দুই প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমের দুই সাংবাদিককে ক্ষমা চেয়ে বলতে হয়েছে, ‘আমাদের সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’ কিন্তু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও রাজনীতিকেরা তো ক্ষমা চাওয়ার ধার ধারেন না। তবে নেটিজ়েনদের লড়াই চলছে।
বিবিসি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের ডেপুটি প্রসিকিউটর ডেভিড সাকারেলিৎজ় বলে চলেন, “বিশেষ করে, নীল চোখ সোনালি চুলের ইউরোপীয়দের এ ভাবে মরতে দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছি।” বিবিসি-র সাংবাদিক তাঁকে বলছেন, “ঠিকই বলছেন। আপনার মনের অবস্থাটা আমি ভালই বুঝছি।”
অ্যালান ম্যাকলিওড নামে এক নেটিজ়েন বিবিসি-র এই প্রতিবেদনের ক্লিপিং টুইটারে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সব চেয়ে নগ্ন বর্ণবৈষম্যবাদী টেলিভিশন কভারেজ।’ আর এক জন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মৃতদের চোখ নীল, গায়ের চামড়া সাদা না হলে এদের আবেগ উথলোয় না?’ এক নেটিজেনের মন্তব্য— তুলনা না করে এরা একটা কথাও কি বলতে পারে না? আর এক জনের প্রশ্ন, ‘ইউরোপ কি সত্যিই শান্তির স্বর্গ? তুরস্কের একটা অংশ বা সার্বিয়া কি ইউরোপ নয়?’
ব্রিটেনের আইটিভি-র সাংবাদিককে কিভের রাস্তা থেকে এক জন যা বলছেন, সেটা তারা বারে বারে সম্প্রচার করে চলেছে। শ্বেতাঙ্গ এক মহিলা বলছেন, “যা ঘটছে সেটা ভাবনার অতীত। এটা কোনও উন্নয়নশীল, তৃতীয় বিশ্বের দেশ তো নয়! এটা ইউরোপ!” একই টিভি চ্যানেলে এক সমর বিশেষজ্ঞ ‘টক শো’-য় বসে মন্তব্য করছেন, “রাশিয়া এমন ভাবে ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র দেগে চলেছে, যেন এটা ইরাক বা আফগানিস্তানের মতো দেশ!”
আমেরিকার সিবিএস নিউজ়ের বর্ষীয়ান শ্বেতাঙ্গ সাংবাদিক কিভের রাস্তায় মাইক্রেফোন হাতে বলছেন এবং তিনি ঘোষণা করছে যে সচেতন ভাবেই এটা বলছেন যে, “এটা ইরাক বা আফগানিস্তানে নয়, তুলনায় অনেক সভ্য, একটা ইউরোপীয় শহর। এখানে এমন ধ্বংস ও মৃত্যু তুমি আশা করতে পারো না।” নেটিজেনরা তথ্য-উপাত্ত টেনে ওই সাংবাদিককে দেখিয়ে দিয়েছেন, ইরাক ও আফগানিস্তানের সভ্যতা নবীন তো নয়ই, বরং ইউরোপীয় সভ্যতার চেয়েও প্রাচীন।
রবিবার ‘আল-জাজিরা’-র সাংবাদিক শরণার্থীর ঢল দেখিয়ে মন্তব্য করেছেন, “এরা সম্পদশালী, শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত মানুষ। এরা উত্তর আমেরিকার সেই সব লোকজন নয়, যাদের একমাত্র লক্ষ্য থাকে যে কোনও ভাবে ইউরোপে সেঁধিয়ে গিয়ে সংসার পেতে বসা।” তাঁর কথায়, যে কোনও দেশ এই শ্বেতকায় শরণার্থীদের পেলে লুফে নেবে। ‘আল-জাজিরা’ কর্তৃপক্ষ পরে এই মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সম্প্রচারের আগে তাঁরা এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
লন্ডনের ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ কলমলেখক ড্যানিয়েল হ্যানান-এর একটি মন্তব্য বিতর্কের ঢেউ তুলেছে। হ্যানান লিখেছেন, ‘যুদ্ধ আর দারিদ্রে পর্যুদস্ত প্রত্যন্ত দেশগুলিতে সীমাবদ্ধ রইল না।’ কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রী ন্যাডাইন হোয়াইট সেই লেখা উল্লেখ করে টুইটে মন্তব্য করেছেন, ‘ভারী অদ্ভুত! এই লেখক দাবি করেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কালো আর বাদামি গরিব মানুষেরাই নাকি শুধু যুদ্ধ করে।’ হ্যানান ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন এই বলে, ‘সত্যিই তেমনটা মনে হচ্ছে আমার লেখা থেকে। এটা দুঃখজনক।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy