Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘মনে হচ্ছিল কাউকে রেহাই দেবে না ওরা’

সুরের ঝর্নায় ভেসে যাচ্ছিল বাতাক্লাঁ মিউজিক হল। শ্রোতারা চোখ বন্ধ করে বুঁদ হয়ে ছিলেন ‘ইগল্‌স অফ ডেথ মেটাল’ –এর কনসার্টের সুর আর গিটারের শব্দ ঝঙ্কারে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ১৪:৩৭
Share: Save:

সুরের ঝর্নায় ভেসে যাচ্ছিল বাতাক্লাঁ মিউজিক হল।

শ্রোতারা চোখ বন্ধ করে বুঁদ হয়ে ছিলেন ‘ইগল্‌স অফ ডেথ মেটাল’ –এর কনসার্টের সুর আর গিটারের শব্দ ঝঙ্কারে।

দেড়শো বছরের পুরনো মিউজিক হল বাতাক্লাঁয় দেড় হাজারেরও বেশি শ্রোতা তখন ভেসে যাচ্ছিলেন ‘ডেথ মেটালে’র সুরে।

কে জানতেন, কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যাবে ‘সাডেন ডেথ’? সব সুর থেমে যাবে ‘অসুর’দের হাতে?

সুরের ওই ঝর্নাতলায় কখন যে চুপিসাড়ে ঢুকে পড়েছিল চার জঙ্গি ‘ডেথ ওয়ারেন্ট’ নিয়ে, মার্কিন রক গ্রুপ ‘ডেথ মেটালে’র কনসার্টে তা কেউ বুঝতেই পারেননি।

জঙ্গিরাও মিউজিক হলে ঢুকে প্রথমে তেমন সাড়াশব্দ করেনি। শুধু তাদের হাতে ধরা একে-৪৭ রাইফেলগুলি গর্জে উঠেছিল। আর সেই রাইফেলগুলি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসছিল গুলি। স্টেজ লক্ষ্য করে। দর্শকাসন লক্ষ্য করে। লোয়ার বক্স, আপার বক্স লক্ষ্য করে। গুলি চালাতে চালাতে তারা ছবি তুলছিল মোবাইল ক্যামেরায়।

লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা-এই সব কিছু নিয়েই ছিল জঙ্গিদের ‘অ্যাকশন’!

এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘প্রথমে দেখলাম, আলোর ঝলকানি। একে-৪৭ রাইফেলের। তার পর দেখলাম ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসছে গুলি। আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোতের মতো! যেন সব কিছু গ্রাস করে নেবে। ছিঁড়ে ফেলবে মিউজিক হলের জমাট অন্ধকারও। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তেই হাতে ধরা মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলছিল জঙ্গিরা। রাইফেলের গুলি ফুরিয়ে গেলে আবার তা ম্যাগাজিনে ভরে নিচ্ছিল। চার জঙ্গি ‘পজিশন’ নিয়েছিল হলের ভেতরে চার দিকে। মনে হচ্ছিল, কাউকে রেহাই দেবে না ওরা। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসছে দেখে চেয়ার ছেড়ে হলের মাটিতে শুয়ে পড়ার হুড়োহুড়ি পড়ে গেল দর্শক, শ্রোতাদের মধ্যে। মাথা বাঁচাতে, বুক বাঁচাতে। দর্শকরা মাটিতে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। প্রাণে বাঁচতে লোয়ার বক্স ছেড়ে আপার বক্সে উঠে পড়ার জন্য মানুষ দৌড়োদৌড়ি করছিল। তাতেও অনেকে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে যায়। মানুষ যাতে মাটিতে শুয়ে পড়েও বাঁচতে না পারে, সে জন্য নিচু হয়ে চেয়ারের তলা দিয়ে উঁকি মেরে ‘শিকার’ খুঁজছিল জঙ্গিরা। কাউকে নড়াচড়া করতে দেখলেই গুলি ছুঁড়ছিল।’’

মার্কিন রক গ্রুপের কনসার্ট শুনতে এসেছিলেন রেডিও সাংবাদিক জুলিয়েন পিয়ার্স। ঘটনার বারো ঘণ্টা পরেও তাঁর চোখ-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। বললেন, ‘‘ওদের আমি গুলি চালাতে চালাতে জিহাদি স্লোগান দিতে দেখেছি। শুনেছি, ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ইংরেজিতে। গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলছে, ‘তোমরা আমাদের সিরিয়ার যে ভাবে হামলা চালাচ্ছ, তার জন্য তোমাদের তো এই মূল্য দিতেই হবে!’ নিজেদের মধ্যে ওদের এ কথাও বলতে শুনেছি, ‘আজ সবকটাকেই শেষ করে দেব। কাউকে এখান থেকে বাড়ি ফিরতে দেব না।’ ওরা এই কথাও বলছিল, ‘আমরাও তো আর বেঁচে ফিরব না এখান থেকে। তার চেয়ে ভাল, সকলকেই মেরে যাই!’ ওরা ভেবেছিল, যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের পণবন্দি করে রাখবে। কিন্তু হলের বাইরে তত ক্ষণে প্রচুর পুলিশ এসে গিয়েছে। তারা হলের ভেতরে ঢুকে গুলিও চালাতে শুরু করেছে। জঙ্গিদের সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে তাদের গুলির লড়াই। এ সবের মধ্যে চার জঙ্গিকে দেখলাম, হলের ভেতরেই নিজেদের মাথায় গুলি করতে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে হলের ভেতর চার জঙ্গিই আত্মঘাতী হয়েছিল।’’

পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ অলাঁকে দৃশ্যতই বিহ্বল অবস্থায় দেখা যায় ফরাসি টেলিভিশনে। কাঁপা কাঁপা গলায় কথা বলতে দেখা যায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ ফরাসি প্রেসিডেন্টকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

paris france bataclan music hall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE