Advertisement
E-Paper

‘লোকটা আসছে মা, আমি এ বার মরব’, মাঝরাতে শেষ এসএমএস ছেলের

রাত ২টো। ফ্লোরিডার মিনা জাস্টিস তখন স্বাভাবিক ভাবেই গভীর ঘুমে। চটকা ভাঙল মাথার পাশে রাখা মোবাইলটায় এসএমএস ঢোকার শব্দে। ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়েই মোবাইল স্ক্রিনটার দিকে তাকান মিনা। তখন ২টো বেজে ৬ মিনিট। ছেলে এডি’র এসএমএস— ‘মা আই লভ ইউ।’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ২০:৪৮

রাত ২টো। ফ্লোরিডার মিনা জাস্টিস তখন স্বাভাবিক ভাবেই গভীর ঘুমে। চটকা ভাঙল মাথার পাশে রাখা মোবাইলটায় এসএমএস ঢোকার শব্দে। ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়েই মোবাইল স্ক্রিনটার দিকে তাকান মিনা। তখন ২টো বেজে ৬ মিনিট। ছেলে এডি’র এসএমএস— ‘মা আই লভ ইউ।’’ আবার ঢুকল এসএমএস— ‘‘ক্লাবের মধ্যে গুলি চলছে।’’

ঘুমের ঘোর ঠিক মতো কাটেনি। মাঝরাতে ছেলের অদ্ভুত বার্তা। তার পর আবার গুলি চলার খবর। কী হয়েছে? বিহ্বল মা ফোন করলেন বছর তিরিশের ছেলেকে। ফোন ধরলেন না এডি। এ বার মা-এর এসএমএস— ‘‘তুমি ঠিক আছো?’’ একটু পরে উত্তর এল, ‘‘বাথরুমে ফেঁসে আছি।’’ কোন ক্লাব? এডি জানালেন, ‘‘পালস। শহরতলিতে।’’এক মিনিট পর আবার এসএমএস, ‘‘আমি মরতে চলেছি।’’

মিনা জাস্টিসের ঘুম ছুটে গিয়েছে ততক্ষণে। বেসরকারি সংস্থায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে কর্মরত ৩০ বছরের এডি অরল্যান্ডোর শহরতলিতে আলাদাই থাকতেন। আকাশছোঁয়া বহুতলে ছেলের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের গল্প প্রতিবেশীদের শোনাতেন মিনা। ‘‘আমার ছেলে খুব বড়লোক’’— বেশ অহঙ্কার নিয়েই বলতেন। ছেলে সমকামী এবং নাইট ক্লাবে যাতায়াত আছে মা জানতেন। শুধু জানতেন না, এমন একটা ভয়ঙ্কর রাত অপেক্ষা করে ছিল।

কয়েকটি এসএমএসের আদানপ্রদানের পর অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ছবিটা। ছেলে নাইট ক্লাবে গিয়ে কোনও বন্দুকবাজের খপ্পরে পড়েছে, প্রাণ বাঁচাতে বাথরুমে লুকিয়েছে, বুঝে নিয়েছিলেন মা। পুলিশের আপৎকালীন নাম্বার ৯১১-এ ফোন করতে আর বিন্দুমাত্র সময় নেননি মিনা জাস্টিস। ছেলেকেও পর পর এসএমএস পাঠাচ্ছিলেন।

‘‘আমি পুলিশকে ফোন করেছি।’’

‘‘তুমি এখনও ওখানেই আটকে আছ?’’

‘‘উত্তর দাও।’’

‘‘আমাকে ফোন কর।’’

অনেকক্ষণ কোনও উত্তর নেই এডির। মিনা জাস্টিস বিহ্বল। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। পুলিশের কাছ থেকেও কোনও বিশদ খবর পাচ্ছেন না। ২টো ৩৯ মিনিটে এসএমএস ঢুকল মিনার মোবাইলে। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন মোবাইলটা চোখের সামনে তুলে নিয়েছেন মিনা। এডি লিখেছেন, ‘‘পুলিশকে ফোন কর মা। এখনই কর।’’ এ বার পর পর এসএমএস এডির মোবাইল থেকে।

‘‘লোকটা আসছে। আমি এ বার মরব।’’

মিনা ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, কারও কোনও ক্ষতি হয়েছে। এডির ছোট্ট জবাব, ‘‘হ্যাঁ। অনেকের।’’

মিনা জানতে চান, পুলিশ পৌঁছেছে কি না। এডি জানান, পৌঁছয়নি। এর পরের এসএমএসটা প্রায় উন্মাদ করে দিল মিনা জাস্টিসকে। এডি জানিয়েছেন, লোকটা বাথরুমে ঢুকে তাঁদের পণবন্দি বানিয়েছে। মাকে এডির কাতর আর্তি, ‘পুলিশকে তাড়াতাড়ি আসতে বল।’

আরও পড়ুন:

শবের মিছিল থামাতেই হবে

মিনার বিশ্বাস হচ্ছিল না। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘লোকটা বাথরুমে ঢুকে পড়ে তোমাদের বন্দি বানিয়েছে?’’ ২টো ৫০ মিনিটে এডির এক শব্দের এসএমএস— ‘‘হ্যাঁ।’’

সেটাই শেষ এসএমএস ছিল। মিনা জাস্টিস এর পরও বার বার এসএমএস করছিলেন। অনেকক্ষণ উত্তর না পেয়ে ফোন করছিলেন। এক বার, দু’বার, তিন বার...। জবাব আসছিল না। অসীম উৎকণ্ঠার প্রহর। বার বার মনে হচ্ছিল, নৈঃশব্দ ভেঙে এখনই একটা এসএমএস হয়তো পাঠাবে এডি। কিন্তু এসএমএস আর এল না। কোনও ফোনও এল না।

সকালে অরল্যান্ডো পুলিশ ওয়েবসাইটে নিহতদের যে তালিকা প্রকাশ করল, তাতে এডি জাস্টিস নামটাও খুঁজে পেয়েছেন মিনা।

Orlando Night Club Shooting Mina Justice Eddie Juctice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy