Advertisement
E-Paper

‘এই তো বেঁচে, আমাদের কি জঙ্গি মনে হয়!’

আর বালাকোট-লাগোয়া জাবা গ্রাম গোড়া থেকেই এক কথা বলে আসছে— ‘‘কিছুই হয়নি এখানে।’’ 

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:৩২
বালাকোটের এক স্থানীয় বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স।

বালাকোটের এক স্থানীয় বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স।

‘সরকারি সূত্র’ বলছে, ৩০০-রও বেশি জঙ্গি মারা গিয়েছে। বায়ুসেনা কিন্তু সংখ্যাটা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। যদিও কাল তারা বলেছে, ‘‘আমরা যে জইশ-শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছি, তার প্রমাণ আছে।’’ আর বালাকোট-লাগোয়া জাবা গ্রাম গোড়া থেকেই এক কথা বলে আসছে— ‘‘কিছুই হয়নি এখানে।’’

পেশায় ভ্যানচালক ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আব্দুর রশিদ কাল সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘মরেছে তো কয়েকটা পাইন গাছ আর একটা কাক! আর কিছুই হয়নি। এত জঙ্গি মরল, আর একটাও দেহ পাওয়া গেল না— এটা হয় নাকি!’’ বাষট্টি বছরের নুরান শাহ কিন্তু সে দিন ভোররাতে বোমার আঘাতে সত্যি আহত হন। ডান চোখের উপরে এখনও সেই ‘প্রমাণ’ স্পষ্ট। কাল নিজেরই বাড়ি দাওয়ায় বসে সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘ওরা নাকি জঙ্গি মারতে বোমা ফেলেছিল! এই তো আমরা বেঁচে আছি। আমাদের কি জঙ্গি মনে হয়?’’

অ্যাবটাবাদের ডেরায় ঢুকে ২০১১-য় ওসামা বিন লাদেনকে মেরে এসেছিল মার্কিন নেভি সিল। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেই অ্যাবটাবাদ শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের শহর বালাকোট। আর এই শহর লাগোয়া পাহাড়ের উপর জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম জাবা। সুযোগ পেলেই এখানে বেড়াতে আসেন পাকিস্তানিরা। এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশের সাংবাদিকেরা। সবাই ‘প্রমাণ’ খুঁজছেন প্রত্যাঘাতের। গ্রামে সব মিলিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের বাস। গ্রাম বলতে, মাটির কয়েকটা বাড়ি আর ‘সন্দেহজনক’ একটা মাদ্রাসা স্কুল। নাম, তালিম-উল-কোরান। নুরানের মতো অনেকে বললেন, এখানে কোনও দিন কোনও জঙ্গি প্রশিক্ষণ হত না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ আবার একেই জইশের জঙ্গি শিবির বললেন।

আরও পড়ুন: গোসা করে যাননি কুরেশি, সুষমার মুখে সন্ত্রাসের সঙ্কট

এই মাদ্রাসার দিকে ২০০৪-এ প্রথম আঙুল তুলেছিল উইকিলিকস। তারা স্পষ্ট বলেছিল, বালাকোটে জাবা গ্রামের কাছে এই মাদ্রাসা খুলে স্থানীয়দের সব ধরনের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জইশ। এখন কী অবস্থা সেই মাদ্রাসার! স্থানীয়দেরই একাংশ বলছেন, ‘‘স্কুলের সাইনবোর্ডে এত দিন ‘নেতা’ হিসেবে মাসুদ আজহার এবং ‘পরিচালক’ হিসেবে মাসুদের শ্যালক ইউসুফ আজহারের নাম লেখা ছিল।’’ কাল সেখানে গিয়ে সাংবাদিকরা দেখলেন, সাইনবোর্ড পাল্টে গিয়েছে। আর গোটা স্কুল চত্বর ঘিরে রেখেছে পাক সেনা। ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। তবে বাইরে থেকে দেখে, এর গায়ে কোথাও আঁচড়টকুও পড়েছে বলে মনে হয়নি সংবাদমাধ্যমের!

ভারতীয় বায়ুসেনা তাই কোন শিবিরে অভিযান চালাল, ঘটনার তিন দিন পরেও ধোঁয়াশা কাটল না। সে দিন জাবায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নাইট শিফটের দায়িত্ব ছিলেন আধিকারিক মহম্মদ সাদিক। কাল তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘বোমায় যে এক জন সামান্য আহত হয়েছিলেন, তিনিও হাসপাতালে আসেননি। অন্য কারও কিছু বলে তো আমরা আগে জানতাম। সব বাজে কথা।’’

তবে আশপাশে বোমা যে পড়েছিল, সে কথা বললেন স্থানীয়রাই। কপালে চোট পাওয়া নুরান জানালেন, সে দিন ভোর ৩টে নাগাদ ভয়ঙ্কর শব্দ আর কাঁপুনিতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। বাইরে বেরোতেই, ফের বোমা পড়ে। এ বার একেবারে বাড়ির দরজায়। তখনই শার্পনেল বা পাথর ছিটকে এসে লাগে তাঁর কপালে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কাল গ্রামের অন্তত ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সবাই বলছেন, বোমা পড়েছিল পরিত্যক্ত জঙ্গল-মাঠে। কেউ মারা যায়নি। আর যে সন্দেহজনক মাদ্রাসার কথা বলা হচ্ছে, তার এক কিলোমিটার দূরে একটি বোমা পড়েছিল বলে চিহ্ন মিলেছে।

তা হলে কি টার্গেট ‘মিস’ করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধীদের একটা বড় অংশ দাবি করছেন— সত্য কী, দেশবাসীকে তা জানাক কেন্দ্র। বলতে দেওয়া হোক বাহিনীকে।

Indian Air Strike Balakot Jaish E Mohammad IAF Indian Air force
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy