Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্যারিস হামলা: ১১ মাসের ছক, পুলিশ তবু দিশাহীন

জার্মানির সীমান্ত-ঘেঁষা বেলজিয়ামের ভেরভিয়ের শহরের সেই বাড়িটা এখনও ভূতের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফটফটে দিনের আলোতেও নাকি গা ছমছম করে। বাড়িটার সারা গায়ে এখনও স্পষ্ট বুলেটের দাগ! গ্রেনেডের ঘায়ে খসেছে পলেস্তারা। শুধু কাঠামোটাই যেন দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে গিলতে আসছে।

সাঁ-দেনির সেই বাড়ি যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আবাউদ ও তার বোনের দেহ।

সাঁ-দেনির সেই বাড়ি যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আবাউদ ও তার বোনের দেহ।

সংবাদ সংস্থা
ভেরভিয়ের ও প্যারিস শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

জার্মানির সীমান্ত-ঘেঁষা বেলজিয়ামের ভেরভিয়ের শহরের সেই বাড়িটা এখনও ভূতের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফটফটে দিনের আলোতেও নাকি গা ছমছম করে। বাড়িটার সারা গায়ে এখনও স্পষ্ট বুলেটের দাগ! গ্রেনেডের ঘায়ে খসেছে পলেস্তারা। শুধু কাঠামোটাই যেন দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে গিলতে আসছে।

এগারো মাস আগে এই বাড়িতেই সন্ত্রাসের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছিল প্যারিস হামলার মূল চক্রী আবাউদ। পুলিশি তৎপরতায় সেই ছক ভেস্তে যায়। ১৫ জানুয়ারির সকালেই সেনা-পুলিশ মিলিয়ে ১৫০ জনের একটি দল এসে ঘিরে ফেলে বাড়িটিকে। শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। আবাউদের হদিস মেলেনি। কিন্তু সংঘর্ষে অন্য দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করে বেলজিয়াম প্রশাসন।

এখন অবশ্য এলাকায় অন্য ছবি। গত কালই ফ্রান্স সরকারি ভাবে জানিয়েছে, পুলিশি সংঘর্ষে মারা গিয়েছে আবাউদ। ড্রাগ-পাচার দিয়ে কেরিয়ার শুরু করা জঙ্গিনেতার আদি বাড়ি ঘিরে তাই ভিড় জমছে কৌতূহলীদের। শুধু প্যারিসে নয়, পুলিশের দাবি, বেলজিয়ামের এই শহুরে ডেরা থেকেই আবাউদ গোটা ইউরোপ জুড়ে সন্ত্রাসের জাল ছড়াতে চেয়েছিল। যার মধ্যে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে সে সফল হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

ভেরভিয়েরে পুলিশ যে দিন হানা দেয়, তার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই প্যারিসের শার্লি এবদোর দফতরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, আইএসের হামলা। কিন্তু পরে এর দায় নেয় ইয়েমেনি আল কায়দা। দিন দু’য়েক পরেই ফের জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয় প্যারিস। এ বার ইহুদি সুপার মার্কেটে। হামলার দায় নেয় আইএস। অনুমান, শার্লি এবদোর দফতরে ভিন-গোষ্ঠীর হামলাই তাতিয়ে দেয় আবাউদকে।

কী ভাবে? নেদারল্যান্ডসের এক সন্ত্রাস-বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কে কতটা ভয়ানক, কে কত সফল— এই প্রতিযোগিতাটা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলতেই থাকে।’’ তাই আইএসের হয়ে ইউরোপ জুড়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েই মাঠে নামে আবাউদ। যার জেরেই গত শুক্রবার প্যারিসের ছ’টি জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা।

কিন্তু এগারো মাস ধরে হাতের নাগালে বসেই যে চক্রী সন্ত্রাসের ছক কষছে, পুলিশ তার হদিস পেল না কেন? প্রশাসনের একাংশ বলছে, ভেরভিয়ের শহরে সংঘর্ষের পরেই সিরিয়ার পালিয়ে যায় আবাউদ। অন্য অংশের যদিও দাবি, জঙ্গিনেতা আদৌ তখন বেলজিয়ামে ছিল না। ছিল গ্রিসে। আবাউদের মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ট্র্যাক করে ও কল রেকর্ড খতিয়ে দেখেই এ কথা জানাচ্ছে বেলজিয়াম পুলিশও।

প্যারিসে হামলা চালাতে সম্প্রতি আবাউদ গ্রিস হয়ে শহরে ঢোকে বলে এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে। ফ্রান্সের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশই তাদের আবাউদ সম্পর্কে আগাম তথ্য দেয়নি। না হলে, এই হামলা ঠেকানো যেত বলে দাবি প্রশাসনের।

ঠেকানো যে যায়নি, প্যারিসে জঙ্গি হামলায় ১২৯ জনের মৃত্যুতেই তা স্পষ্ট। আর চক্রী যে নিজে শহরে উপস্থিত থেকে এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, তারও প্রমাণ মিলেছে আজ সিসিটিভি ফুটেজে। হামলার দিনেও শহরতলির একটি মেট্রো স্টেশন থেকে মেলা ফুটেজে আবাউদকে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পলাতক জঙ্গি সালাহ আবদেসলাম সম্পর্কে এখনও কোনও তথ্য নেই পুলিশের কাছে। এ দিকে, স্যাঁ দেনির আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছে তৃতীয় জঙ্গির মৃতদেহ। তার পরিচয় যদিও খোলসা করেনি পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাল রাতে যে পাসপোর্টটি উদ্ধার হয়েছে, তা যে নিহত মহিলা জঙ্গি হাসনা এইত‌্‌বুলাখেনের, তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

বুধবারের পুলিশি অভিযানের একটি অডিও ফুটেজও হাতে এসেছে সংবাদমাধ্যমের। মিনিট কয়েকের এই রেকর্ডটিতে শোনা গিয়েছে পুলিশের সঙ্গে হাসনার কথা কাটাকাটি। এক পুলিশ কর্তা তাকে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘তোমার প্রেমিক কোথায়?’’ জবাব এসেছে, ‘‘ও আমার প্রেমিক নয়।’’ দ্বিতীয় প্রশ্ন করতে না করতেই শোনা যায় বিস্ফোরণের আওয়াজ। মনে করা হচ্ছে, তখনই শরীরে বাধা বিস্ফোরক বেল্টে চাপ দিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয় হাসনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

terror plot paris 11 months
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE