Advertisement
E-Paper

বন্ধ শিক্ষার দরজা, কাঁদলেন ছাত্রীরা

দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। কোনও ছাত্রীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩৫
আফগান মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান।

আফগান মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান। —ফাইল ছবি

প্রাথমিকের পরে মেয়েদের হাই স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও দিন দুই আগে পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছিলেন আফগানিস্তানের নারীরা। গত কাল আচমকাই এক সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আফগান মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালিবান। আফগান সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্ব জুড়ে।

গত কালের ওই সিদ্ধান্তের পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি তালিবান সরকার। কত দিন ধরে ওই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে জানানো হয়নি সেটাও। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়েছেন আফগান ছাত্রীরা। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গেটের বাইরে অনেককেই তাই কাঁদতে দেখা গিয়েছে। একে অপরকে জড়িয়ে সান্ত্বনাও দিতে দেখা গিয়েছে।

আজ সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সংবাদমাধ্যমকে আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছিল না। ছবি তোলা বা খবর করার উপরেও কড়া নজর রাখা হচ্ছিল। কোনও ছাত্রীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি আজ। তবে ক্লাস করবেন না, এই শর্তে কিছু কিছু জায়গায় ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানান, ওই সব ছাত্রীর কিছু প্রশাসনিক কাজ বাকি ছিল, তাই তাঁরা সেগুলি সারতে এসেছিলেন। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র রাহিমুল্লা নাদিম সংবাদমাধ্যমকে আজ থেকে ছাত্রীদের জন্য ক্লাস বন্ধ হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে আজ প্রতিবাদ জানান কিছু তরুণী। তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তাঁরা বলেছেন, ‘‘দয়া করে শিক্ষার মধ্যে রাজনীতিকে আনবেন না। আরও একবার আফগান মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। আমরা বাদ পড়তে চাই না।’’

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তালিবানি মুখপাত্রেরা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আফগান বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, খোদ তালিবান নেতা হেবায়তুল্লা আখুন্দজ়াদা ও হাতে গোনা কয়েক জন শীর্ষ নেতার নির্দেশে এই ফরমান জারি হয়েছে। জনসমক্ষে এই তালিবানি নেতাদের বিশেষ দেখা যায় না। নিজের জন্ম ভিটে কন্দহর থেকেই সরকার পরিচালনার কাজ করে থাকেন আখুন্দজ়াদা। কাবুল সরকারি ভাবে আফগানিস্তানের রাজধানী হলেও মূলত কন্দহর থেকেই গোটা দেশ পরিচালনার নানা নির্দেশ আসে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে তালিবান উদার নীতি মেনে চলা ও নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার যে বার্তা দিয়েছিল, তা কালকের এই সিদ্ধান্তে আরও একবার জোরদার ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা। বিশ্বের দরবারে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় তালিবান পুরোপুরি ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। তালিবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়াও এর পরে আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসন। প্রথমে আমেরিকান বিদেশ দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছিলেন, তাঁরা তালিবানের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করছেন। পরে মুখ খোলেন খোদ আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও। তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের আর কোনও দেশের সরকার মেয়েদের শিক্ষায় এ ভাবে বাধা দেয় না। তাঁর কথায়, ‘‘আফগানিস্তানে সকলের সমানাধিকার রক্ষিত না হলে তালিবান কোনও দিনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈধ সদস্য হতে পারবে না।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এই সিদ্ধান্তের ফল তালিবানকে ভুগতে হবে।’’

Educaton Students Kabul Afghan Taliban
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy